মুস্তাকিম নিবিড়ঃ
বাঙালির অহংকার পদ্মা সেতুর দুপাশে রয়েছে সুবিস্তীর্ণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইওয়ে। যা সংযুক্ত করেছে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল কে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক সেতু বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতু-১ (পোস্তগোলা সেতু) রাজধানী ঢাকার সাথে সংযুক্ত করেছে বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক কে, যা পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগব্যবস্থাকে করেছে সুদৃঢ়। ২০২০ সালে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় এর আঘাতে পোস্তগোলা ব্রিজের দুইটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০২০ সালে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১ (প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতু) ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। তৎকালীন সময়ে সেতুতে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। ২০২০ সালে সদরঘাটে ডুবে যাওয়া মর্নিং বার্ড লঞ্চ উদ্ধারে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা উদ্ধারকারী জাহাজের ধাক্কায় সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়ার পর ওই দিন রাতেই যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর সওজ বিভাগের এক্সপার্ট টিম পরিদর্শন করার পর সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তৎকালীন সময়ে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা অঞ্চল) সবুজ উদ্দিন বর্তমানেও একই পদে বহাল রয়েছেন। তাই ব্রিজের সকল বিষয়ে তিনি ওয়াকিফহাল আছেন। তাই সংশ্লিষ্ট জনেরা আশা করছে সেতুটির পূর্ণ সংস্কার কাজ তার তত্ত্বাবধানে আরো বেশি পরিপক্ক হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এর আওতাধীন পোস্তগোলা ব্রীজ, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক এন-৮ এক্সপ্রেসওয়ে এর তৃতীয় কিলোমিটারে অবস্থিত। উদ্ধারকারী জাহাজটির ধাক্কায় ব্রীজটি প্রচন্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অতঃপর তা আংশিকভাবে সংস্কার করা হলেও ব্রীজটির ধারন ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণবঙ্গের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুদৃঢ় হয়ে পড়ে, যাতে পোস্তগোলা ব্রিজের উপরেও যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রীজটি যেন কোন ধরনের দুর্ঘটনার স্বীকার না হয়, এবং তার শক্তি ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্রীজটির দুটি গার্ডার মেরামত ও পূণ স্থাপন কাজ সম্পন্ন করার জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সওজ।
পোস্তগোলা ব্রীজটি পুণ সংস্কারের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর মুন্সিগঞ্জ বিভাগস্থ কেরানীগঞ্জ উপবিভাগ । তাই সেতুটির পুনসংস্কার এর দায়িত্ব পালন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর মুন্সিগঞ্জ বিভাগ। সেতুটি পূর্ণ সংস্কারের দায়িত্ব পেয়েছে মনিরুজ্জামান মালিকানাধীন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান একলেকটিক লিমিটেড। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খানের তত্ত্বাবধানে সওজ মুন্সিগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোঃ নাহিন রেজা ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ এ তদারকিতে সওজ এর মেধাবী প্রকৌশলীরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সংস্কার কাজ চলমান অবস্থায় দিনর ২৪ ঘন্টা তদারকি করে চলছে মুন্সিগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহীন রেজা ও কেরানীগঞ্জ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ সহ অন্যান্য প্রকৌশলী কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ। সংস্কার কাজ চলমান অবস্থায় ঢাকা বিভাগের সকল জোনের কোন না কোন কর্মকর্তা দূরদূরান্তর থেকে এসে সার্বক্ষণিক সংস্কার কাজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদারকি করে চলছে। সরেজমিনে দেখা যায় সংস্কার কাজকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সকল সদস্য। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পুনঃসংস্কার কাজের পাশাপাশি সড়ক জনপথের কর্মকর্তারাই ব্রীজ পুনঃ সংস্কারের কারণে সৃষ্ট যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে সড়ক তদারকি করছেন। সওজের অনেক মেধাবী সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময় চীনমৈত্রী সেতু -১ (পোস্তগোলা ব্রিজ) ফিরে পাচ্ছে তার হারিয়ে যাওয়া শক্তি। অচিরেই সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি হবে ঝুঁকিমুক্ত। খুব দ্রুতই ৩৫ বছর পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ পোস্তগোলা ব্রীজটি পুণ সংস্কারের সুফল জাতি পেতে চলছে। সেতুটি পুনঃসংস্কারের ব্যাপারে স্থানীয় জনগণ বলেন,সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছিলো, সড়ক কর্তৃপক্ষ তা পুনসংস্কার করে আমাদের জীবননাশের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করেছে। ব্রিজের চলাচলকারী অনেক পথচারীরাই স্বস্তি প্রকাশ করে সরকার তথা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এই অনন্য উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়।
সেতু সংস্কারে টেন্ডার প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান একলেকটিক লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান দৈনিক জাতীয় অর্থনীতিকে বলে ” আমরা পোস্তগোলা ব্রিজ এর পূর্ণ সংস্কার কাজের দায়িত্ব পেয়েছি, কাজে ব্যবহৃত সকল কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানিকৃত। ব্যবহারিত মালামালের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখছি, ব্রীজটি যেন তার হাড়িয়ে যাওয়া শক্তি ফিরে পায় সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমরা লোড টেস্ট করছি, সওজের মেধাবী প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে সংস্কার কাজ ভালোভাবেই চলছে, কিন্তু প্রকল্পের বরাদ্দ ও খরচের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রথমে কিছুটা এড়িয়ে গেলেও অতঃপর তিনি বলেন আমাদের সবকিছু পরিচ্ছন্ন আছে, এতে দুর্নীতি অনিয়ম হওয়ার কোন সুযোগ নাই।