বাজারে স্বস্তি নেই সয়াবিনের ।এক বছরের ব্যবধানে সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে ৩৩ টাকা। সয়াবিনের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সাধারণ মানুষের কষ্টও বাড়ছে। খুচরা বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম সর্বোচ্চ ১৬৮ টাকা। এ পরিস্থিতিতে দাম কমানোর জন্য ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।
বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতি লিটার ১৬৮ টাকার সয়াবিন তেল আমদানি পর্যায়ে সরকার শুল্ক কর বাবদ রাজস্ব পাচ্ছে প্রায় ১৭ টাকা। গত বছর প্রতি লিটার দাম যখন ১৩৫ টাকা ছিল, তখন সরকার প্রতি লিটারে রাজস্ব পেত ১৫ টাকা। অর্থাৎ আমদানি মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে আমদানিতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সয়াবিন আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৬৫৯ কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৩৮২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে এক বছরের ব্যবধানে সয়াবিন আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব বেড়েছে ২৭৭ কোটি টাকা বা প্রায় দ্বিগুণ।
দাম কীভাবে কমতে পারে সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য হলো, সয়াবিন তেল প্রায় আমদানিনির্ভর। এ পরিস্থিতিতে করভার কমানো হলে দাম কিছুটা কমবে। তবে করভার কমানোর পক্ষে নন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, করভার কমানোর সুফল ভোক্তারা পান না, বরং ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সরকার তেল আমদানি করে বাজারজাত করলে বাজার স্থিতিশীল হতে পারে।
তবে ব্যবসায়ী বা বিশেষজ্ঞ সবাই একমত—বিশ্ববাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় এখন আমদানি সরবরাহ ঠিক আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। কারণ, সরবরাহ ঠিক না থাকলে যে কেউ বাজার অস্থিতিশীল করার সুযোগ নিতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস পর্যন্ত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। দাম বাড়তে থাকায় সামনে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।
দেশের আটটি প্রতিষ্ঠান এখন অপরিশোধিত সয়াবিন এনে কারখানায় পরিশোধন করে বাজারজাত করে। আবার প্রাণিখাদ্য হিসেবে সয়াবিন বীজ এনে মাড়াই করে অপরিশোধিত সয়াবিন পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে বছরে ১২ লাখ টনের মতো সয়াবিনের চাহিদা আছে দেশে।
সয়াবিনের বিশ্ববাজার চড়া—এ নিয়ে সন্দেহ নেই কারও। তাহলে দাম কীভাবে কমতে পারে তা নিয়ে মতভেদ আছে ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের। সয়াবিন বাজারজাতকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার বলেন, এ মুহূর্তে দাম কমানোর একমাত্র উপায় শুল্ক-কর কমানো। করভার কমানো হলে দাম কিছুটা হলেও কমবে।
মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার আরও বলেন, ‘সরবরাহ ঠিক রাখাটাও এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরবরাহ যদি ঠিক থাকে, তাহলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আর বাজারে যৌক্তিক দাম পেলে আমদানি করতে কেউ পিছপা হবে না। আমরাও আমদানি অব্যাহত রেখেছি।’
তবে করভার কমানোর পক্ষে নন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, দাম যখন বাড়তে থাকে, তখন দাম কমানোর স্বাভাবিক পদক্ষেপগুলো কাজ করে না। এ ক্ষেত্রেও শুল্কছাড় দেওয়ার পরও ভোক্তাদের সুবিধা না পাওয়ার শঙ্কা আছে।