তামিম ইকবাল পারেননি, কিন্তু পারলেন নাজমুল হোসেন। পাল্লেকেলেতে তামিম ‘নড়বড়ে নব্বইয়ে’র শিকার হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে একের পর এক ব্যর্থতায় যিনি ‘নড়বড়ে’ করে ফেলেছিলেন, সেই নাজমুল ঠিকই আদায় করে নিলেন সেঞ্চুরি। তামিম, নাজমুলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হকও। ব্যাটিং অর্ডারে শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের ব্যাটে পাল্লেকেলে টেস্টে আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ একটা দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে ২ উইকেট ৩০২ রান টেস্টে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বিচার করলে যথেষ্ট স্বস্তিদায়কই বলা চলে।
নাজমুলকেই আজ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মূল চালিকাশক্তি বলা যেতে পারে। সেঞ্চুরি পেয়েছেন, সেই সেঞ্চুরির ধরনটাও দারুণ। ২৮৮ বলে ১২৬ রান করে দিন শেষে তিনি অপরাজিত। দলীয় মাত্র ৮ রানে সাইফ হাসানের ফেরার পর ঠিক যে ধরনের ব্যাটিং দরকার ছিল, নাজমুল আজ ঠিক সে ধরনের ব্যাটিংই করেছেন। তামিমের ছায়ার আড়ালে থাকলেও ধীরে ধীরে নিজেকে খোলস ছাড়া করেছেন। প্রথমে তামিমের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৪৪ রানের জুটি ও দিন শেষে মুমিনুল হকের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১৫০ রানের জুটিতে তিনি নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন।
তামিমের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নাজমুলের শান্ত, ভেবেচিন্তে খেলার ব্যাপারটি ছিল দুর্দান্ত। মোট কথা নাজমুল আজ ঠিক সেই ধরনের ব্যাটিংই করেছেন, যেটি টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সবাই দেখতে চায়। তামিম ৯০ রানে দিনের দ্বিতীয় সেশনে আউট হয়ে ফিরে গেলেও নাজমুল নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি। মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের কাজটি ঠিকই করে গেছেন। আঁটসাট ব্যাটিংয়ে লঙ্কান বোলারদের খাটিয়ে মেরেছেন। ব্যক্তিগত ২৮ রানের মাথায় শ্রীলঙ্কান উইকেটকিপার নিরোশান ডিকভেলার ব্যর্থতা জীবন পাওয়া নাজমুল দিনের দ্বিতীয় আর শেষ সেশনে লঙ্কান বোলারদের আর কোনো সুযোগই দেননি। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে ইনিংসের ৭৪তম ওভারে ২৩৫ বল খেলে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটি পেয়ে যান এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। নাজমুলের ইনিংসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, ইনিংসে কোনো ভুল শট না খেলা।
সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান হিসেবেই জাতীয় দলে এসেছিলেন। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকটা হয়েছিল হঠাৎ করেই। অভিষেক ইনিংসে সম্ভাবনা দেখালেও এরপর কেন যেন নিজের মতো করে খেলতেই পারছিলেন না। সমালোচনা হচ্ছিল ব্যর্থতার পরেও নাজমুলকে তিন নম্বরে খেলিয়ে যাওয়া। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা ছিল তাঁর প্রতি। আজ পাল্লেকেলেতে সেই আস্থারই প্রতিদান দিয়েছেন তিনি।
অধিনায়ক মুমিনুল ১৫০ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত। তিনি জুটির গোটা সময়টাতেই নাজমুলকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন দারুণভাবে। তাঁর কাজটা আসলে অনেক বেশি সহজ করে দিয়েছিল নাজমুলের ব্যাটিংই।
টেস্ট ক্রিকেটে দিন শেষে এমন স্বস্তির দেখা খুব কমই পেয়েছে বাংলাদেশ। তামিম আউট হয়ে যাওয়ার পর যে হতাশাটা, সেটি দিন শেষে দারুণভাবে কাটিয়ে দিয়েছেন নাজমুল-মুমিনুল। এ মুহূর্তে স্কোরবোর্ডের যে চেহারা, তাতে বাংলাদেশ এই টেস্ট জয়ের জন্য বড় একটা সংগ্রহে চোখ রাখতেই পারে। এখনো পর্যন্ত পাল্লেকেলেতে উইকেট পুরোপুরি কথা বলেছেন ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। এই উইকেটে স্থিতধী ব্যাটিংয়েই ফল মিলেছে বাংলাদেশের। কাল দ্বিতীয় দিনেও পাল্লেকেলের ব্যাটিং সহায়ক পরিবেশের সুযোগটা কোনোভাবেই ছাড়তে চাইবেন না বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা।