পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে তথাকথিত দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ও নাগরিকদের উন্নত সেবা দিতে ‘হালাল’ উপায় চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের। এ জন্য এক ধরনের ‘এজেন্সি’ সেবা চালু করতে চান ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী।
বুধবার গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়সহ অধিদপ্তরের অন্যান্য কার্যালয়গুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে এজেন্সি চালুর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী বলেন, লকডাউন উঠে যাওয়ায় এখন নতুন পাসপোর্ট এবং পুরনো পাসপোর্টের রি-ইস্যুর আবেদন বেড়ে গেছে। এছাড়া মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হওয়ায় তারা পাসপোর্ট চান। ও-লেভেল, এ-লেভেল শিক্ষার্থীসহ বিদেশে অধ্যয়নে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদেরও পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়। পাসপোর্টের চাহিদা থাকার কারণে দালালদের দৌরাত্ম্য আছে, তবে সেটি আগের মতো নয়। তারা এখন কাউকে কাউকে হয়তো ফরম পূরণের কাজটি করে দিচ্ছে, কারণ অনেকেই নিজে থেকে সঠিকভাবে ফরম পূরণ করতে পারেন না। এ কাজটিই যদি কোনো এজেন্সি করে, তাহলে কিন্তু আর দালাল থাকবে না।
দেশ-বিদেশের কিছু উদাহরণ তুলে ধরে জেনারেল আইয়ুব আরও বলেন, দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে নাগরিকদের ফরম পূরণ করে দিতে আমরা ডিজিটাল সেন্টারগুলোর সাহায্য নিচ্ছি। তারা কিছু টাকা চার্জ করে। অনেক দেশের দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করলে দেখবেন যে এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। আবার অনেক দেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাস থেকেও পাসপোর্ট রি-ইস্যুর আবেদন আমাদের কাছে এজেন্সির মাধ্যমে আসছে। কাজেই পুরো ব্যবস্থাটাকে এভাবে সাজালে দালালদের কাছে গিয়ে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানি বা প্রতারিত হতে হবে না। বরং তারা একটি পেশাগত সেবা পাবেন। চাইলে তিনি ঘরে থাকবেন, এজেন্সি তার পাসপোর্ট ঘরে দিয়ে আসবে।
তবে এজেন্সি ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলক করা হবে না বলেও তিনি জানান। যারা নিজেরা উপস্থিত হয়ে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা নিতে চান, তাদের অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সেবা দেওয়া হবে।
দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে দাবি করেন মহাপরিচালক। একই সঙ্গে অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন কার্যালয়ে দায়িত্বরত কর্মীদের বিরুদ্ধে দালালদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
পাসপোর্ট মহাপরিচালক বলেন, দালালদের নিবৃত্ত করতে আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করি। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্যও নেওয়া হয়। আমাদের কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে, সেগুলোর বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে আসা ৯০ শতাংশ অভিযোগই এ দালাল সংক্রান্ত। এমন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে বিভাগীয় শাস্তি ভোগ করেছেন এমন নজিরও আছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এসব বিষয়ে আরও কঠোর আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে।
বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদেরও দ্রুততার সঙ্গে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেনারেল আইয়ুব।
এক্ষেত্রে এক থেকে দেড় মাস সময়ের মধ্যে তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, অনেক সময় বিদেশ থেকে পাসপোর্ট আমাদের কাছে আসতে দেরি হয়। গত মঙ্গলবার একজন বিদেশ থেকে সরাসরি আমাকে অভিযোগ করেছেন যে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার দুই মাস পার হলেও রি-ইস্যু হওয়া পাসপোর্ট পাননি। আমি খতিয়ে দেখলাম যে সেটি আমাদের সিস্টেমে জমা পড়েছেই ১৬ আগস্ট, অর্থাৎ মাত্র একদিন হয়েছে সেটি আমাদের কাছে এসেছে। সাধারণত এগুলো অনেক সময় বিদেশ থেকে আসতে কুরিয়ার বা অন্য কোনো কারণে দেরি হয়। তবে আমাদের সিস্টেমে আসা মাত্রই দ্রুত সেগুলো নিয়ে কাজ করা হয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান ফেডেক্সের মাধ্যমে সেগুলো পাঠিয়েও দেওয়া হয়।
দালালদের তৎপরতা কমাতে এবং নাগরিকদের সচেতন হতে দেশের গণমাধ্যমের কাছেও সাহায্য চেয়েছেন ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।