দিনভর তিনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন বলে কানাঘুষো চলছিল। কিন্তু দিন শেষে জানা গেলো, বিয়ে করতে যাচ্ছেন নয়, বরং ৫ দিন আগেই বিয়ে করে ফেলেছেন রেলমন্ত্রী মো.নূরুল ইসলাম সুজন। দিনাজপুরের বিরামপুরের মেয়ে শাম্মী আকতার মনিকে গত শনিবার (৫ জুন) বিয়ে করেন তিনি।
শাম্মী আকতার মনির বড় ভাই মো. মিলন হোসেন বৃহস্পতিবার (১০ জুন) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘরোয়াভাবে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে আমার বোনের সঙ্গে রেল মন্ত্রীর বিয়ে হয়েছে। বিয়েতে বরপক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিরামপুরের বিচারপতি ইজারুল হক ও তার স্ত্রী। কনে পক্ষে আমি ও আমার ভাই উপস্থিত ছিলাম।
তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে ছোট পরিসরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। আমার বোন উত্তরায় থাকে। ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডমিনে চাকরি করতো। এরইমধ্যে ল’ পাস করে হাইকোর্টে এক সিনিয়রের সঙ্গে প্র্যাকটিস করছে।
মিলন হোসেন আরও বলেন, আমার বোন বর্তমানে উত্তরার বাসায় আছে। ডিসেম্বর মাসে স্বামী রেলমন্ত্রী সুজনের বাড়িতে যাবে। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী যখন বিয়ের অনুমতি দেন তখন মন্ত্রীকে ফোনে বলেছেন, দেখেন আপনার বিয়েতে উপস্থিত থাকতাম। কিন্তু করোনার কারণে থাকতে পারলাম না। আপনি বিয়ে করে ফেলেন। আমি পরবর্তী সময়ে বউকে বরণ করবো। এজন্য আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বাসায় নেবেন রেলমন্ত্রী। তবে এখন বোনের উত্তরার বাসায় আছেন মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, আমার বোনের এর আগে কুষ্টিয়ায় বিয়ে হয়েছিল। পারিবারিক সমস্যার কারণে ২০১১ সালে ডিভোর্স হয়ে যায়। ওই ঘরে একটি মেয়ে রয়েছে। এরপর থেকে মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকে আমার বোন। ঈদ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিরামপুরের বাড়িতে বেড়াতে আসতো। মাঝে মধ্যে আমরাও যাই।
বিরামপুর নতুন বাজার এলাকার মৃত আব্দুর রহিমের মেয়ে মনি। মনির দুই ভাই এক বোন। দুই ভাই বর্তমানে বিরামপুরের বাসায় থাকেন। বড় ভাই মিলন হোসেন ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী। অপরজন স্থানীয় ব্যবসায়ী। তাদের আগের বাড়ি পাবনায় ছিল। মনি আওয়ামী লীগের একজন কর্মীও বটে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) লাইনম্যান পদে চাকরির সুবাদে কয়েক বছর আগে আব্দুর রহিম বিরামপুরে আসেন। তারপর বিরামপুরেই থেকে যান। এরপর বিরামপুরের নতুন বাজার এলাকায় জায়গা কিনে বাড়ি করে স্থায়ী হন।
তবে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলেও এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি রেলমন্ত্রী। এর আগে রেলভবনে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসা মহিলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেত্রী বিষয়টি সত্য বলে নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, সব ছেলে-মেয়েদের বিয়ের পরে তিনি বড্ড একা হয়ে পড়েছেন। তার একজন সঙ্গী তো দরকার। আমরাই সে ব্যবস্থা করছি।
রেলমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)রাশেদ প্রধান বলেন, বিয়ের বিষয়টি আমরা শুনেছি , যা বলার মন্ত্রী নিজেই বলবেন। আমাদের কাছে এখনও ধোঁয়াশা। পরিষ্কার করে কিছুই বলতে পারছি না।
৬৫ বছর পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, রেলমন্ত্রী বিয়ে করেছেন এটি সঠিক। বিষয়টি আমি তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে শুনেছি। তবে তার পরিবারের অনেকেই এখনও বিষয়টি জানেন না। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরাও জানেন না। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রী নিজেই জানাবেন।
এর আগে রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক ৬৭ বছর বয়সে বিয়ে করে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি তিন সন্তানের জনক। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর নূরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী, তিন সন্তানের জননী নিলুফার ইসলাম অসুস্থতায় ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ভোটের পরদিন তার দাফন সম্পন্ন হয়। ওইদিন ভোটে তিনি জয়লাভ করেন। তারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তিন সন্তানেরই বিয়ে হয়েছে।
নূরুল ইসলাম ১৯৫৬ সালের ৫ জানুয়ারি পঞ্চগড়ে জন্মগ্রহণ করেন।পেশায় তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলারও একজন আইনজীবী ছিলেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসন থেকে নবম, দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।