মোঃ ইস্রাফিলঃ
আধুনিক টেকসই সড়ক নির্মাণের জন্য এবং সড়ক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নানা গবেষণার লক্ষ্যে উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশ সরকারও আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত গবেষণাগার নির্মাণের জন্য রাজধানী ঢাকার পাইকপাড়ায় পুরাতন গবেষণাগারের প্রায় ৪২ একর জমির উপর দেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম আধুনিক ও বিশ্বমানের সড়ক গবেষণাগার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকায় বসবাসরত সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যত্র পুনর্বাসন করতে বিলম্ব হওয়া এবং নানা জটিলতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থবিরতা থাকলেও, বর্তমানে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মহা-কর্মযজ্ঞ। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে আশাবাদী প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা।
পরপর চারবার ক্ষমতায় আসীন বর্তমান সরকার ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মেগা প্রকল্পের আওতায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ আর অলিক নয়, দৃশ্যমান!তারই ধারাবাহিকতায় দেশের ইতিহাসে প্রথম বাস্তবায়ন হলো মেট্রোরেলের মতো আধুনিক ও বিশ্বমানের গণ পরিবহন যোগাযোগ মাধ্যম। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, কয়লা ভিত্তিক দেশের প্রথম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ দেশের সর্ববৃহৎ ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ প্রায় শেষের পথে।দেশের নানা প্রান্তের সড়ক-মহাসড়কগুলো উন্নতি হচ্ছে ৪,৬,৮ লেনে।তবে অত্যান্ত হতাশার বিষয়ে এই যে, মেঘা প্রকল্প সহ সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণের এবং এগুলোর টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশে বিশ্ব মানসম্মত আধুনিক কোন গবেষণাগার ও যন্ত্রপাতি নেই। তাই, সরকার আধুনিক ও টেকসই সড়ক নির্মাণ এবং এগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিশ্বমানের একটি গবেষণাগারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে রাজধানী ঢাকার মিরপুরস্থ পাইকপাড়ার পুরাতন সড়ক গবেষণাগারের প্রায় ৪২ একর জমি বরাদ্দ দেয়। ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ইং তারিখে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে “সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-২” এর আওতায় এস্টাবলিসমেন্ট অফ রোড রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (আর আর টি সি)প্রকল্পের তৃতীয় অংশের মধ্যে প্রথম অংশের কার্যক্রম শুরু হয়।প্রকল্প বাস্তবায়ন ৩০ মাস ও অতিরিক্ত ১২ মাস সময় ধরে আগামী জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে কল্পনা করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর যৌথ অর্থায়নে প্রায় দুইশত ৫১ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়।আন্তর্জাতিক কনসালটেন্সি ফার্ম কেসিআই, কুদাই, গফ্, সুসাং,লাসা জেভি ও সহযোগী আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কনসালটেন্সি ফার্ম বিসিএল, বিইটিসি, ডিটিসিএল ও পিল্কওয়ে এর কনসালটেন্সিতে ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ যোগ্য ষষ্ঠ তলা রিসার্চ সেন্টার বিল্ডিং, সপ্তম তলা ট্রেনিং সেন্টার বিল্ডিং, তৃতীয় তলা টেস্টিং ল্যাব বিল্ডিং, দ্বিতীয় তলা ওয়েলফেয়ার বিল্ডিং, জেনারেটর-সাবস্টেশন বিল্ডিং এবং গেইট হাউজ বিল্ডিং নির্মাণ করার অনুমোদন দেওয়া হয়। ৯-ই সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং তারিখে দেশের অন্যতম স্বনামধন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) লিমিটেডকে নির্মাণ কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি ১২ ই ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করে।
বাস্তবায়ন সময়ের বড় একটা অংশ নানা জটিলতায় স্থবিরতা থাকলেও বর্তমানে দুর্বার গতিতে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্মাণ কাজ সহ নানা বিষয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পিএম), নির্বাহী প্রকৌশলী, আশিক কাদির জাতীয় অর্থনীতি কে জানান– ইতিপূর্বে আপনারা হয়তো জানেন যে, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন এলাকাতে প্রায় ৪ শতাধিক সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসবাস করতেন। তাদের অন্যত্র আবাসন ব্যবস্থা করে তাদের এখান থেকে স্থানান্তর করা-ই ছিল আমার জন্য সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু জায়গায় তাদের আবাসনের চেষ্টা করেও নানা কারণে ব্যর্থ হই। আর এতেই আমার এই প্রকল্প টি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকটা সময় চলে যায়। তারপরেও মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এবং অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়, আমার সহকর্মী কর্মকর্তা-কর্মচারী, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অত্র এলাকায় বসবাসরত সড়ক ও জনপথ বিভাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে কৃতজ্ঞ, দেরিতে হলেও সবার সহযোগিতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রায় ৮০ শতাংশ জমি ইতিমধ্যে বুঝে পেয়েছি এবং অচিরেই বাকি অংশটুকু পেয়ে যাব।তিনি আরো বলেন, প্রকল্প শুরুর প্রথম ১৮ মাসেও প্রকল্প বাস্তবায়নের দশ শতাংশ অগ্রগতি আনতে পারিনি তবে, আশাবাদের বিষয় হচ্ছে গত ছয় মাসে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রমের প্রায় ২৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আপনি দেখতে-ই পাচ্ছেন, প্রায় তিন-চারটি বিল্ডিং এর নির্মাণ কার্যক্রম একযোগে চলমান রয়েছে। প্রজেক্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক ভাইয়েরা ডবল শিফটে কাজ করে আমাদের বিলম্ব হওয়া সময়ের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে আরো জানান,সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা পেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন সময় ৩০ মাসে প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শেষ না করতে পারলেও অতিরিক্ত ১২ মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে, ইনশাল্লাহ!