নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে এ অঞ্চলের মানুষকে বের করে আনতে আঞ্চলিক অভিযোজন সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আরেকটি দুর্যোগ তাদের ওপর আঘাত হানে। ফলে যেকোনো অগ্রগতি উল্টে যায়। এই চক্র ভাঙতে দক্ষিণ এশিয়াকে অঞ্চল হিসেবে দুর্যোগে টিকে থাকার সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।
মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশে বৈশ্বিক অভিযোজন কেন্দ্রের (গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন, জিসিএ) আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিসিএ’র বাংলাদেশ কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব জিসিএর সভাপতি বান কি মুন ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, ভূমিধস, হিমবাহে ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয় ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণ এশিয়া। এমনকি তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেও বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৭০ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন, গ্রিন হাউজ গ্যাসের কারণে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এবং অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতি রোধে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির বিষয়ও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের সরকার ২০০৯ সালের বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে নানা পদক্ষেপ এবং অভিযোজন কর্মসূচি নিয়েছে। ২০০৯ সালে আমরা জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছি এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত ৪৩ কোটি ডলার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়েছি। অভিযোজন বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর জিডিপির এক শতাংশ, অর্থাৎ ২০০ কোটি ডলার করে ব্যয় করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ শীর্ষক শতবর্ষী পরিকল্পনাও সরকার গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার অভিযোজন ও জলবায়ুসহিষ্ণুতা অর্জনে জিসিএ’র বাংলাদেশ কার্যালয় সহায়তা করবে বলে আশাবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আশা করি, এই কার্যালয়ের মাধ্যমে অভিযোজন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা ও কর্মসূচি বিনিময় হবে। এ অঞ্চলের অভিযোজন বিষয়ক সমস্যা সমাধান এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে কাজ করবে এই কার্যালয়।
ইউএনএফসিসিসি’র জলবায়ু বিষয়ক দু’টি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’ এবং ‘ভালনারেবল-২০’-এর সভাপতি পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতায় জিসিএ’র ঢাকা কার্যালয় সমর্থন দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ‘অনন্য নজির’ স্থাপন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় এখানকার জনগণ বারবার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। তারপরও পরিবর্তন করার মতো এখনো অনেক কিছু আছে। আমি মনে করি, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশেরও অভিযোজন বিষয়ে একই ধরনের অভিজ্ঞতা ও কর্মসূচি রয়েছে। আমরা একসঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা ও উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।
এসময় বৈশ্বিক সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে এবং ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুত জাতীয় সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সব দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং একসঙ্গে কাজ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যতেও এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় আমাদের একে অন্যকে ছেড়ে যাওয়া উচিত নয়।