শেরপুরঃ
দেখলেই মনপ্রান জুড়িয়ে যায় শেরপুরের চোখ ধাঁধাঁনো এক অপরূপ সৌন্দর্য্যের সমাহার “বাবর আলী মসজিদ”। শহরের জেলা সদর হাসপাতাল রোডস্থ নারায়ণপুর বাগবাড়ী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ওই মসজিদটির নির্মাণশৈলী নজর কেড়েছে মুসল্লীদের, বিস্ময়ের জ্যোতি ছড়িয়েছে শহরের চারদিকে। মসজিদটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে হলেও প্রতিদিন স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মুসল্লী ও দর্শনার্থী ছুটে আসছেন নামাজ আদায়ে ও দেখতে।
জানা যায়, গত তিন বছর ধরে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সৌদি আরবের একটি মসজিদকে অনুকরণ করে বাবার নামে এই ‘বাবর আলী জামে মসজিদ’ নামকরণ করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন শেরপুরের বিশিষ্ট দানবীর খ্যাত শিল্পপতি আলহাজ্ব মো. ইদ্রিস মিয়া। মসজিদটির সম্পূর্ণ জমি ও নির্মাণকাজের সিংহভাগ অর্থের যোগান দিয়েছেন তিনিই। বাকী অর্থ যোগান দিচ্ছেন তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও এলাকার সাধারণ জনগণ। এই মসজিদে একসাথে নামাজ পড়তে পারবেন দুই হাজার মুসল্লী। পাশেই থাকছে পর্দা সম্বলিত অন্তত: ৩/৪শ মহিলার নামাজ পড়ার ব্যবস্থা। নকশা অনুযায়ী মসজিদের ভিতরের কাজ অনেকটা শেষ হলেও বাইরের কাজ এখনও বাকী আছে। ৪০ শতক জমির উপর নির্মিত মূল সড়ক থেকে সিঁড়ি করে দুতলায় নির্মিত এই মসজিদটির কাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি রমজান মাসেই। কিন্তু মসজিদটির উদ্যোক্তা ইদ্রিস মিয়া হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে চলে যান গত ১২ এপ্রিল। ফলে আপাতত মসজিদের নির্মাণ কাজের গতি কিছুটা কমে গেছে। তবে তার উত্তরসূরী এবং মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের সহযোগিতার হাত সব সময়ই থাকবে বলে জানান স্থানীয়রা। এদিকে ইতোমধ্যে এ মসজিদের নাম ছড়িয়ে পড়ায় দূর-দূরান্ত থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা মসজিদটি দেখতে এবং নামাজ পড়তে আসেন। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, নানা কারুকাজ, কাঠের আসবাবপত্র, দামি পাথর, টাইলস ও বর্ণিল আলোর ঝলকানিতে রাতের বেলা মসজিদটি হয়ে উঠে আরও সুন্দর। মসজিদে আলো-বাতাস যাতে সহজে চলাচল করতে পারে সেজন্য চারপাশে রয়েছে বিশাল খালি জায়গা। ওই খালি জায়গাতে তৈরি করা হচ্ছে দেশী-বিদেশী ফুল-ফলের বাগান। মসজিদের বিশাল ছাদেও বাগান তৈরির কাজ চলছে। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে দামী আধুনিক টাইলস, পাথর, নকশা ও রং। সব মিলিয়ে এটি এখন আধুনিক এক স্থাপত্য বলে মনে করেন স্থানীয়রা। অন্ততঃ কোটি টাকার সেগুন কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দরজা ও খোদাই করা নকশা বিশিষ্ট বিশেষ বিশাল আলমারী। মসজিদজুড়ে লাগানো হয়েছে বর্ণিল বাতি। রং আর আলোতে মিলে রাতের মসজিদকে করে তুলে আরও আকর্ষণীয়। এশা ও ফজরের নামাজে নানা রঙের বাতিগুলো কিছুক্ষণ পরপর রং পরিবর্তন হয়ে বিশেষ এক আবহের সৃষ্টি করে। আধুনিক শিল্প আর নকশা আঁকা এই মসজিদটি যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক অনন্য শিল্প। এই মসজিদের মোয়াজ্জিনের মায়াবী আজানের ধ্বনি ও ইমামের সূরা-ক্বেরাত এলাকার মুসলমানদের নামাজের প্রতি বিশেষ এক আগ্রহের সৃষ্টি করে বলে শহরের অনেকেই জানিয়েছেন।
মুসল্লিদের সুবিধার্থে মসজিদটিতে থাকছে গরম ও ঠান্ডা অযুর পানি। মসজিদটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানোর কাজ চলছে। মসজিদের সামনে বসানো হবে বিশাল আকারের ফোয়ারা। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ইদ্রিস মিয়ার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মসজিদের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে স্বজনদের বলে গেছেন, এই মসজিদটি যেন সর্বদা উজ্জীবিত রাখা হয়। মসজিদটির অসমাপ্ত কাজের বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ইদ্রিস মিয়ার একমাত্র ছেলে গুলজার মো. ইয়াহহিয়া জিহান বলেন, একটি অত্যাধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা নিয়ে বাবার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অবশ্যই তিনি রক্ষা করবেন। এজন্য মসজিদের পূর্ববর্তী সকল পরিকল্পনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। এখানে টাকার কোন হিসাব করা হবে না। যাযা প্রযোজন তাই করা হবে।