দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আক্রান্তদের মধ্যে আরো ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের বিস্তার রোধে লকডাউনের মধ্যেই গত ১১ মে দেশে করোনায় মৃতের মোট সংখ্যা ১২ হাজার পেরিয়ে যায়। তার সঙ্গে আরো এক হাজার নাম যুক্ত হলো এক মাসে। মাঝে কিছুদিন দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও জুনের শুরু থেকে তা ৩০ থেকে ৪০ এর ঘরে ঘোরাফেরা করছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে গত এক দিনে আরো ২ হাজার ৪৫৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ে। ফলে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৮ লাখ ২২ হাজার ৮৪৯ জন হয়েছে। তবে সরকারি হিসাবে আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরো ২ হাজার ২৮৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। নতুন সুস্থদের নিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ মোট হয়েছেন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯১৬ জন।
দেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ ; আর সাড়ে ৭ লাখ পেরিয়ে যায় চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়ায়। এরপর ওই বছরের ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ অগাস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ছাড়ায় মৃতের সংখ্যা।
গত বছরের শেষ দিকে কমে আসে দৈনিক মৃত্যু। ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজারের ঘর ছাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ৮ হাজার এবং ৩১ মার্চ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়ায়। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ১৫ দিনেই এক হাজার করোনা রোগীর মৃত্যু ঘটে। গত ১৫ এপ্রিল মৃতের মোট সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর পরের এক হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটাতে মাত্র দশ দিন সময় নেয় করোনাভাইরাস। মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায় গত ২৫ এপ্রিল। তার ১৬ দিন পর গত ১১ মে করোনায় মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এক মাসের মাথায় গতকাল শুক্রবার তা ১৩ হাজার ছাড়াল। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সে সময় টানা চার দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশর ওপরে।
গত বছর মার্চে দেশে করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর সংক্রমণের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকার পরিস্থিতিই সবচেয়ে খারাপ ছিল। কিন্তু করোনার নতুন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় রাজশাহী ও খুলনার ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে দেখা যায়, গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যেখানে ৪৮০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেখানে রাজশাহী বিভাগে পাওয়া গেছে ৬৮২ জন নতুন রোগী। খুলনায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৫৯৯ জনের মধ্যে।
একক জেলা হিসেবে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৩৩৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এই সময়ে ঢাকা জেলায় ২৮৫ জন, খুলনা জেলায় ১৫৬ জন, চট্টগ্রাম জেলায় ১২৯ জন, যশোর জেলায় ১২৮ জন, সাতক্ষীরা জেলায় ১১১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫১০টি ল্যাবে ১৮ হাজার ৭৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৩টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২৯২টি; বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮১টি।
ঢাকা বিভাগে দৈনিক শনাক্তের হার ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এলেও রাজশাহী বিভাগে তা বেড়ে ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ হয়েছে। খুলনা বিভাগে তা সামান্য কমে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। জেলাওয়ারি হিসেবে এদিন বাগেরহাটে শনাক্ত রোগীর হার ৪৩ শতাংশ, খুলনায় ৩৬ শতাংশ, যাশোরে ৩২.৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ২০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৩ শতাংশ আর ঢাকায় ৪ শতাংশের কিছু বেশি।
শনাক্ত রোগীর সংখ্যার মত মৃত্যুর সংখ্যাতেও গতকাল এগিয়ে ছিল রাজশাহী বিভাগ। গত এক দিনে মারা যাওয়া ৪৩ জনের মধ্যে ১১ জনই রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। ১০ জন ছিলেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া ৮ জন ঢাকা বিভাগের, ৭ জন খুলনা বিভাগের, ২ জন বরিশাল বিভাগের, ৪ জন রংপুর বিভাগের এবং ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
গত এক দিনে যারা মারা যাওয়াদের ৩০ জন পুরুষ আর নারী ১৩ জন। তাদের ৩৬ জন সরকারি হাসপাতালে, ৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। বাসায় মারা গেছেন এক জন। তাদের মধ্যে ২৪ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং ২ জনের ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।