বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে মজুত থাকা গ্যাসে ১০ বছর চলবে। বৃহস্পতিবার ( ১৫ জুন ) সংসদের বৈঠকে প্রশ্নোত্তরে অংশ নিয়ে তিনি একথা জানান। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
সাংসদ কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশে নতুন আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র ইলিশায় মজুতসহ বর্তমানে গ্যাসের প্রাথমিক মজুত ৪০ দশমিক ৪৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট এবং উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুত ২৮ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ৩১ মে ২০২২ পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৯৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট উত্তোলন করা হয়েছে। ৮ দশমিক ৮২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট মজুত অবশিষ্ট রয়েছে। দৈনিক গড়ে ২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বিবেচনায় এ গ্যাসে ১০ বছর চলবে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল পিএসসি–২০১৯’ হালনাগাদকরণের জন্য নিয়োজিত আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মতামত ও পেট্রোবাংলার নিজস্ব পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল পিএসসি–২০১৯’ পরিমার্জনপূর্বক হালনাগাদ যুগোপযোগীকরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ‘অফশোর মডেল পিএসসি–২০১৯ হালনাগাদের পর নতুন বিডিং রাউন্ড আগামী বছরের প্রথম নাগাদ ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সরকার দলীয় সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ জানান, গ্যাসের অপচয় রোধে আবাসিক পর্যায়ে ৪০ লাখ ৬২ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। বাকি আবাসিক পর্যায়ক্রমে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হবে। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহানের প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে বছরে এলপিজির চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। দেশে সরকারি পর্যায়ে উৎপাদন মাত্র ২ শতাংশ। বাকি চাহিদা বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।
তিনি জানান, কাতার ও ওমানের সঙ্গে পেট্রোবাংলার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় বছরে ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া স্পট মার্কেট থেকে চাহিদা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৩০ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। এর আনুমানিক পরিমাণ এক দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ২০২৩ সালে স্পট মার্কেট হতে ২১ কার্গো এলএনজি আমদানির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার আনুমানিক পরিমাণ এক দশমিক ৩১ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৮ জন। বিগত অর্থ বছরে (২০২১-২২) পল্লী বিদ্যুতের নীট ক্ষতি ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ সময়ে আয় রয়েছে ২৯ হাজার ১০৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ও ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৬২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। দেশের সব উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হয়েছে।
সাংসদ মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি/সংস্থা এ পর্যন্ত ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৪৫টি প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে, যা মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের (৪ কোটি ৫১ লাখ) ১২ দশমিক ০৯ শতাংশ। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আরো ২৭ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৩১ লাখ ৩০ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট মিটারগুলো পর্যায়ক্রমে প্রি-পেইড/স্মার্ট প্রি-পেইড মিটারে রূপান্তর করা হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমান নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে এক হাজার ১৭৮ দশমিক ৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে সৌরশক্তি হতে ৯৪৪ দশমিক ৮৮ মেগাওয়াট।