দেশে মূল্যস্ফীতির এমন দুঃসময়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৫ জানুয়ারি) সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভা হয়। সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নজরদারি করতে বলেছেন। নজরদারি করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রের কথাও তিনি বলেছেন। অনেক সময় দ্রব্যমূল্যের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ আসে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি।
আরেকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তা হলো দুর্নীতি। দুর্নীতির বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্সের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়িত্ব না দুর্নীতি দমন করার। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সচিব ও সব মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্ব রয়েছে। তাই নজরদারিসহ দুর্নীীত দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক নির্ধারিত কোনো আলোচ্য বিষয় থাকে না উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই সভায় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
এদিন ১৫/১৬ জন সচিব বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন এবং এর মধ্যে ১১ জন সচিব নির্দিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন আর ।
আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর আদায়ের প্রতি মনোযোগী হতে নির্দেশনা দিয়েছেন। যাদের আয়কর দেওয়ার কথা, অথচ করের আওতায় আসেনি, তাদের করের আওতায় আনতে জোরালো নির্দেশনা দিয়ে তিনি সচিবদের প্রতি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অহেতুক হয়রানি না করতে নির্দেশ দিয়ে সতর্ক করে বলেছেন, এমন হলে বিষয়টি তিনি ভালোভাবে নেবেন না।
এছাড়া সভায় পাট, চামড়া ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির বিশেষ সুযোগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতের মতো চামড়া, কৃষি ও পাটজাত পণ্যেও একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে বলেছেন। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সেচ মৌসুমে সেচ সুবিধা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে নজর দিতে বলেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রমজানের প্রস্তুতি, খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন ও সার ব্যবস্থাপনা, কর্মমুখী শিক্ষা, নতুন পাঠ্যক্রম ও কর্মমুখী শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।
সংসদীয় কার্যাবলীতে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের কথাও বলেছেন তিনি। ২০৪১ সাল নাগাদ তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী পাঁচ বছরে সরকার পরিচালনার মূলনীতি হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহার। কাজেই ইশতেহার বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
একই সঙ্গে নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প থেকে জনমানুষের উন্নয়ন হয়েছে কি না, সেটা তিনি জানতে চাইবেন। কাজেই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টি দেখতে বলেছেন।