পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলাটি সিআইডি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। রিজার্ভ চুরির সঙ্গে যে তিন-চারটি দেশের সংযোগ রয়েছে, সেসব দেশের কাছে আমরা তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। সেখান থেকে তথ্য এলেই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা নেবো।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায় এবং আট কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। এই টাকা উদ্ধারে একটি মামলা করার সিদ্ধান্ত হলেও এখনও মামলা করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিনিময় আইডিটিপি প্ল্যাটফর্ম থেকে ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মো. গোলাম রব্বানী, মো. শামীম আহমেদ ও রুহুল আমিন । এ সময়ে তাদের কাছ থেকে কম্পিউটারের সিপিইউ, বিপুল পরিমাণ মোবাইল ফোনের সিম, ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড, ১৪টি মোবাইল ফোন সেট ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের বিভিন্ন ধরনের রেজিস্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বোধনকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠিত ‘বিনিময়’ ইন্টারোপারেবল ডিজিটাল ট্রান্সজেকশন প্লাটফরম। এটি ব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র গত ১০ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৯৬ লাখ ৭৪ হাজার ২৫৭ টাকা ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে। এই প্রতারক চক্র মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘সেলফিনের’ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্মের প্রবেশ করে তাদের নিজেদের বিকাশের ব্যক্তিগত একাউন্টে অবৈধভাবে টাকা ট্রান্সফার করার জন্য অনুরোধ পাঠায়।
পরে এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিকাশের ইন্টারন্যাশনাল ওয়ালেটের একটি নম্বর থেকে প্রতারকদের বিকাশের ব্যক্তিগত একাউন্টের ছয়টি বিকাশ নম্বরে ৯৬ লাখ ৭৪ হাজার ২৫৭ টাকা ট্রান্সফার হয়। প্রকৃতপক্ষে ওই সময়ে প্রতারক চক্রের সদস্যদের সেলফিন অ্যাপ একাউন্টে কোনো টাকা না থাকা স্বত্বেও বিনিময় প্লাটফর্ম থেকে ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের একটি চৌকস টিম বুধবার বগুড়া শহরে অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তার গোলাম রব্বানী বগুড়া জেলার সদর থানার ফুলবাড়ি মধ্যাপাড়া গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে, আর রুহুল আমিন আব্দুল গফুরের ছেলে এবং মো. শামীম আহমেদ একই থানার এরুলিয়া হাজীপাড়া গ্রামের মো. আব্দুস সাত্তারের ছেলে।