বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামে ধান ক্ষেতের মধ্যে ধানের চারায় ছড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। গত এক মাসে টানা পরিশ্রমে ১২০ বিঘা জমিতে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। দুই রঙের ধানের চারা রোপণের পর থেকে যত্নে বড় হয়ে উঠা চারাগুলোয় ঠিকঠাক ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। বলা হচ্ছে এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যক্ষেত্রে বড় চিত্রকর্ম যা বিশ্ব রেকর্ডের অপেক্ষায় আছে।
জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামের ১২০ বিঘা কৃষি জমিতে গত ২৯ জানুয়ারি ধানের চারা রোপণের মধ্যে দিয়ে শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নির্মাণের কাজ (রূপদান) শুরু হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উচ্চ ফলনশীল দুই ধরণের ধানের চারা রোপণের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। শস্য চিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।
সোনালী ও বেগুনি রঙের বিশেষ দুটি জাতের ধানের চারা রোপণ করা হয়। এই দুই রঙের সমন্বয়ে ধানের চারা যতটা বড় হয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ততটাই ফুটে উঠেছে। গত এক মাসে অধিক যত্নের কারণে এবং সঠিক পরিচর্যায় ধানের চারাগুলো বেশ বেড়ে উঠেছে। অত্যন্ত সতেজ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান চাষের মাঠে বঙ্গবন্ধুর ছবি ফুটে উঠেছে। কৌশলগত কারণে ধানের চারা চাষের মধ্যে দিয়ে বগুড়াসহ দেশে প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধুর ছবি ফুটে উঠেছে শস্যের মাঠে। শেরপুরের বালেন্দা গ্রামে একত্রে ১২০ বিঘা জমি কৃষকদের নিকট থেকে ৬ মাসের জন্য লিজ নেয়া হয়েছে। লিজ নেওয়ার পর কৃষকদের সম্মতি নিয়ে সেখানে চীন থেকে আমদানি করা বেগুনি ও সবুজ (যা সোনালী বর্ণ ধারণ করবে) দুই ধরনের হাইব্রিড ধানের বীজ রোপণ করা হয়।
রোপণকৃত বীজে চারা উৎপাদন করে তা দিয়ে ১২০ বিঘা জমিতে নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা স্থানে বেগুনি ও সবুজ ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। যা উঁচু থেকে ৪০ একর বা ১২০ বিঘা জমিতে রোপণকৃত ধানের চারার দৃশ্যে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ এর প্রতিকৃতি দেখা মিলছে।
শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি বাস্তবায়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে এর আগে চীনে ২০১৯ সালে শস্য চিত্র তৈরি করা হয়েছিল, যার আয়তন ছিল ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট। এবার বগুড়ার গ্রাম বালেন্দায় যে বঙ্গবন্ধুর শস্যচিত্রটির আয়তন হবে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট বা ১ লাখ ২০ হাজার বর্গ মিটার।
মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের সহযোগিতায় এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যা গ্রিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশের জন্য নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে।
শস্যচিত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি তৈরি করার জন্য দুই ধরনের ধানের চারা বেছে নেওয়া হয়েছে বেগুনি ও সোনালী রঙ। বগুড়ার বালেন্দা গ্রামের চল্লিশ একর জমির মাঠ প্রস্তুত করতে একশ বিএনসিসি সদস্যের দল অংশ নেয়। আসছে ১৭ মার্চ শস্যচিত্রটি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে উদ্বোধন করা হবে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হবে এটি। এই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর আয়তন হবে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। শস্যচিত্রের দৈর্ঘ্য ৪শ মিটার এবং প্রস্থ হবে ৩শ মিটার। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গ্রিনেজ বুকে স্থান পেয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি কৃষকরাও নতুনভাবে উজ্জীবিত হবে।
ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে বিগত কয়েক মাস আগে থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। কৃষকদের নিকট থেকে লিজ নেওয়া হয়েছে জমি। ইতিমধ্যে ধানের চারা বেড়ে উঠায় শস্যচিত্রে ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি (ছবি)। জমির খুব কাছ থেকে দেখা না গেলে ও কিছুটা উঁচু থেকে এই চল্লিশ একর জমিতে রোপণকৃত ধানের দৃশ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দেখা যাবে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ম আবদুর রাজ্জাক জানান, শস্যচিত্রটি চলতি মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরিপূর্ণ হবে। গিনেস বুকে রেকর্ড এর জন্য শস্য চিত্রের সব তথ্য কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। এখন অপেক্ষা চলছে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার। আশপাশের গ্রামের মানুষ দল বেঁধে বেঁধে দেখে যাচ্ছেন। অনেকেই এসে ক্ষেতগুলোর খবরা খবর নিয়ে যাচ্ছেন।
শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর জমির কৃষি শ্রমিকরা জানান, কোথায় সবুজ আর কোথায় বেগুনি ধানের চারা রোপণ করা হবে তা আগে থেকে দাগ দেয়া ছিল। সেই মোতাবেক চারাগুলো লাগানো হয়েছে। শতাধিক নারী পুরুষ কাজ করেছে এখানে। তবে এটা যে বঙ্গবন্ধুর ছবি হবে তা প্রথমে বোঝা যায়নি। ধানের চারা বড় হওয়ার পর সেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি দেখা যাচ্ছে। কোন কমতি নেই। যেন চিত্রশিল্পী হাত দিয়ে এঁকেছেন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল মালেক জানান, তারা দুইজনেই ৫ এবং ৮ বিঘা জমি লিজ দিয়েছেন ৬ মাসের জন্য। ৬ মাসের জন্য বিঘা প্রতি তারা পেয়েছেন ৯ হাজার করে টাকা। তারা জানান, শুরুতে যখন জমি লিজ দেয়া হয় তখন বোঝা যায়নি যে তাদের জমিও ইতিহাসের অংশ হবে। ধানের চারা বড় হওয়ার পর দেখা গেল বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাসছে। এখন শুনছি এটি নাকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্র। সারা বিশ্বের মানুষ চিনবে। ইতিহাসের ভাগিদার হয়ে গেলাম।