বিশেষ প্রতিনিধি গাইবান্ধা :
জলাশয় পুনঃখনন কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাটের খামারপাড়া আবাসনের পুকুর পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। নামমাত্র সংস্কার কাজ করে ঠিকাদার ধাপেরহাট ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি আবদুর রাজ্জাক ওরফে সাহেবের বিরুদ্ধে মোটা অংকের বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিজেকে সরকার দলের নেতার পরিচয় দিয়ে আবদুর রাজ্জাক মৎস বিভাগের অসাধু কর্মচারীদের পরোক্ষ যোগসাজসে এই অনিয়ম-লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ সুবিধাভোগীসহ স্থানীয়দের।
যদিও অনিয়মের কারণে খনন কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয়রা। কিন্তু তারপরেও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ক্ষমতার দাপটে শ্রমিকের
বদলে খনন যন্ত্র (ভেকু) মেশিন দিয়ে তড়িঘড়ি করে খনন কাজ শেষে করেছে ঠিকাদার আবদুর রাজ্জাকের লোকজন।
জেলা মৎস অফিস সূত্রে জানা যায়, জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস উৎপাদন বৃদ্ধি (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ধাপেরহাট
খামারপাড়া আবাসনের ০.৩৪২ হেক্টর আয়তনের পুকুর পুনঃখননে বরাদ্দ করা হয় ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। জেলা মৎস দপ্তর গাইবান্ধার
বাস্তবায়নে পুকুর খনন কাজের ঠিকাদারীর দায়িত্ব পান আ’লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে সাহেব। গত ২৫ মার্চ পুকুর খনন কাজ শুরু
হয় এবং শেষ হয় ৩০ এপ্রিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুকুরের তলায় ১.০০ মিটার গভীর খননের কথা থাকলেও তা যৎসামান্য মাটি কাটা হয়েছে। পুকুরের পাড় চওড়া
করার কথা থাকলেও পুকুরপাড়ের গাছপালাসহ বসতঘর বেড়ায় মাটি ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে পাড় বাঁধানো হয়েছে। এতে গাছপালা ও বেশ
কয়েকটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, পুকুর খননে শ্রমিক দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও তা না করে খনন যন্ত্র (ভেকু) মেশিন
দিয়ে মাটি কাটা শেষ করা হয়েছে। এতে নামকাওয়াস্তে পুকুর খনন ও পাড় বাঁধার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই মাটি ধসে যাওয়ার শষ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৭ জন পুরুষ ও ৩ জন নারীসহ ২০ জন সুবিধা ভোগী নিয়ে দল গঠনের কথা থাকলেও তা শুধু সাইনবোর্ড আর কাগজ-কলমেই সিমাবদ্ধ।
সুবিধাভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিডিউল ও নির্দেশনা অনুযায়ী পুকুর খননে কোন কাজই করা হয়নি। পুকুর খননের ঠিকাদার সাহেব তার নিজের ইচ্ছেমতো খনন কাজ করেছেন। তিনি ভুমিহীন ও সুবিধাভোগীদের কোন কথা কর্নপাত না করেই ভেকু মেশিন দিয়ে নামমাত্র খনন কাজ করে সরকারী টাকা লুটপাটের পরিকল্পনা করেছে। তারা জানায়, কোন রকম পুকুরের তলদেশের মাটি কেটে পাড় বাঁধা হয়েছে। খনন কাজে অনিয়মের কারণে কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয়রা। কিন্তু প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে স্থানীয়দের হুমকি-ধামকি দিয়ে দায়সাড়াভাবে মাটি খুঁড়েছে ঠিকাদারের লোকজন। সঠিকভাবে পুকুর খনন না হওয়ায় মাছ চাষ নিয়ে শষ্কার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশষ্কা স্থানীয় সুবিধা ভোগীদের। মৎস কর্মকর্তার কার্যালয়ের কিছু কর্মচারী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের যোগসাজসের কারণে পুকুর খনন কাজে নয়ছয় হয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে ধাপেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. জালাল উদ্দিন মন্ডল হিরু মুঠফোনে সাংবাদিককে বলেন, ‘সঠিক তদারকি না থাকায় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে দিনদুপুরে ঘটছে সংস্কার কাজের নামে পুকুর চুরির ঘটনা। সরকারের দেয়া উন্নয়নের নামে
ঠিকাদাররা তাদের উন্নয়ন করছে। দলের পরিচয়ে কোন ঠিকাদারের অনিয়মের দায় আ’লীগের নয়। পুকুর খনন কাজে অনিয়মের বিষয়টি
দ্রুত তদন্ত করে সরকারের বরাদ্দ লুটপাটকারী ঠিকাদারসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি’।
এদিকে, পুকুর খননে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগের বিষয় জানতে গেলে ঠিকাদার আ’লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে সাহেব
রীমিমতো উত্তেজিত হয়ে ওঠেন সংবাদকর্মীদের ওপর। এসময় তিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেন, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারী দলের
নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে ম্যানেজ করেই পুকুর খনন কাজ করছি। পুকুর খননে কোন অনিয়ম হয়নি, আপনাদের যত ইচ্ছে লিখতে
থাকেন, পারলে আমার বিল আটকে দেন’।
খনন কাজ নিয়ে কথা হয় সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. শাহারিয়া খান বিপ্লবের সঙ্গে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার দেওয়া ডিও লেটারে পুকুরটির খনন কাজ চলছে। তবে খনন কাজে অনিয়মের কারণে স্থানীয়দের কাজ বন্ধের বিষয়টি তার জানা আছে। এখনো পুকুর খননের পুরো কাজ শেষ হয়নি। সন্তোষজনক কাজ না হলে বিল বন্ধ করাসহ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা মৎস কর্মকর্তা আব্দুদ দাইয়্যান জানান, নির্দেশনা ও নিয়ম অনুযায়ী পুকুর খনন কাজ সম্পন্ন করতে হবে। খনন কাজে
কোন অনিয়মের সুযোগ নেই। যেহেতু পুকুর খনন কাজে চুড়ান্ত বিল এখনো প্রদান করা হয়নি। তাই ঠিকাদারের কাছে সঠিকভাবে কাজ
বুঝিয়ে নেওয়ার পর বিল প্রদান করা হবে। এছাড়া সংবাদকর্মীদের সঙ্গে ঠিকাদারের দাম্ভিকতা দেখানোসহ খনন কাজে অনিয়মের বিষয়টি
খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।