নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ‘শহীদ আব্দুল জব্বার মঙ্গলবাড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের’ প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ ও সহকারি প্রধান শিক্ষিকা সুমাইয়া উম্মে শামসি’র বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যক্রমের অভিযোগ উঠেছে। তাদের এ অনৈতিক সর্ম্পকের কারণে ভেঙ্গে পরেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষা ব্যবস্থা। স্থানীয়রা একাধিকবার তাদের হাতেনাতে আটক করেছে। তাদের অনৈতিক র্কমকান্ডের জন্য ইতিপূর্বে কয়েকবার অবরুদ্ধ হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে ও অর্থের বিনিময়ে বার বার পার পেয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ইতির্পূবে একাধিক বার লিখিত অভিযোগ করা হলেও বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছে। বরং যারা প্রতিবাদ করেন তাদেরকেই মিথ্যা মামলায় জরিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সচেতন অভিভাবক ও এলাকাবাসী সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলে ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও রকম ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন সহ অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ অপসারণের দাবী জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, নওগাঁর সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার মঙ্গলবাড়ি গ্রাম। তারপাশের জেলা জয়পুরহাট সদর। সীমান্তবর্তী এ দুই জেলার অবহেলিত দরিদ্র নারীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে ১৯৯৬ সালে স্থানীয় শিক্ষা অনুরাগী শহীদ আব্দুল জব্বারের নামানুসারে শহীদ আব্দুল জব্বার মঙ্গলবাড়ি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে বিদ্যালয়টি সুনামের সঙ্গে চললেও ২০০১ সালের ৩ জানুয়ারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন আবুল কালাম আজাদ। এর এক বছর পর সহকারি প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন সুমাইয়া উম্মে শামসি। এরপর থেকে সহকারি প্রধান শিক্ষিকার সাথে বেশ কয়েকবার অনৈতিক সর্ম্পকে জড়িয়ে পরেন আবুল কালাম আজাদ।
অভিযোগ রয়েছে, আবুল কালাম আজাদ প্রধান শিক্ষক হওয়ার আগে জয়পুরহাট জেলার গ্রামীন ব্যাংকের দোগাছী শাখায় মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। সে সময় নারি কেলেঙ্কির ঘটনায় তাকে চাকরিচুত্য করা হয়। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে জয়পুরহাটের একটা বাসায় ওই শিক্ষিকার সঙ্গে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে তার নিজ বাসায় এবং এপ্রিল মাসে রাজশাহীতে একটি প্রশিক্ষণে গিয়ে এ দুই শিক্ষক -শিক্ষিকার অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া ২০১৫ ইং সালেও তাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে ধামইরহাট থানায় জিডি আছে।
করোনা ভাইরাসের কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষিকা কারণ ছাড়াই স্কুলে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটান। গত ২০শে মার্চ তারা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে স্থানীয়া দেখে ফেলায় তাদের অবরুদ্ধ করলে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে মুক্ত হয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয়সহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত ৬/৫/২১ তারিখে জয়পুরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বাদী ও শিক্ষিকা সাক্ষী হয়ে ছয়জনকে আসামী করে চাঁদাবাজি ও মানহানী মামলা করেন। মামলাটি মিথ্যা প্রমান হবে বুঝতে পেরে কয়েকদিন পর শিক্ষিকা সুমাইয়া উম্মে শামসি বাদী ও প্রধান শিক্ষক সাক্ষী হয়ে রাজশাহী সাইবার অপরাধ ট্রাইবুনালে আবারও একটি মামলা করেন।
মামলার আসামীরা হলেন- বাংলা টিভির জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি ও জয়পুরহাট সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, শিক্ষক খাজা ময়েন উদ্দিন, অত্র প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস, শিক্ষক আশরাফুল আলম, শিক্ষক আবুল হাসনাত মুকুল এবং শিক্ষক ইকবাল হোসেন। কিন্তু ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অনৈতিক কর্মকান্ডে অভিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও স্কুলের অভিভাবক সদস্য ওবাইদুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘদিন থেকে স্কুল বন্ধ। কিন্তু তারা দু’জন প্রতিদিন স্কুলে আসেন। আমরা যারা মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে হয়রানীমুলক মামলা দিয়েছে। তারা দুজনে কেউ বাদী হয় আবার কেউ স্বাক্ষী হয়। এভাবে তারা পর্যায়ক্রমে মামলা দিয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা আতোয়ার রহমান বলেন, আমরা এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই। তাদের এ অনৈতিক কার্যক্রমে বাচ্চারা কি শিক্ষা গ্রহন করবে। কেন আও প্রশাসন নিরব। বেশ কয়েকবার জেলা শিক্ষা অফিস, ইউনএন অফিসে,শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে, তবুও তাদের নিরব ভূমিকায় আমরা চরমভাবে হতাশ।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি খাজা ময়েন উদ্দিন বলেন, প্রধান শিক্ষকের নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি এলাকার সবাই অবগত। গত ২০শে মার্চ তারা বিদ্যালয়ের কক্ষে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে স্থানীয়রা দেখে ফেলায় তাদের অবরুদ্ধ করলে পরে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারেন সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া এসে তাদের মুক্ত করে।
জয়পুরহাট সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক ও বাংলা টিভির প্রতিনিধি রেজাউল করিম রেজা বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করি। সংবাদ প্রকাশের মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলা দিয়ে আমাদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে যদি আমাদের হয়রানি করা হয় তবে আমরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করবো কি করে। আমি তথ্য মন্ত্রনালয়সহ সরকারের সৃদৃষ্টি কামনা করছি। যাতে আমরা মুক্তভাবে কাজ করে যেতে পারি। আরও যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে তারা আজ ভয়ে কথা বলতে পারছেনা। এগুলোর সঠিক তদন্ত করে ওই শিক্ষক ও শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় জাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান আলী বলেন, ওই শিক্ষক ও শিক্ষিকার অনৈতিক কর্মকান্ড দীর্ঘদিনের। যা এলাকার সকলেই অবগত। এর আগেও ৩/৪বার তাদের বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয়রা আটক করে। তাদের বার বার সতর্ক করা হলেও উল্টো যারাই প্রতিবাদ করে তাদেরকে হুমকি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। বিদ্যালয়ের কক্ষে সম্প্রতি আবারও অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হলে হাতেনাতে ধরা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে ওই শিক্ষক ও শিক্ষিকা মিথ্যা হয়রানী মূলক মামলা দেয়। যা অত্যান্ত দু:খজনক ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি আদালতে চলমান মামলার বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে চাইনা। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা রটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যা মিথ্যা।
এ ব্যাপারে সহকারি প্রধান শিক্ষিকা সুমাইয়া উম্মে শামসির সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি সাংবাদিক পরিচয়ে তার ফোন নাম্বারে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গনপতি রায় অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও সমাজসেবা অফিসার সহ তিনসদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারনে তদন্তটি শেষ করতে পারেনি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।