মালদ্বীপে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিকদের বৈধ করা, দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া, নতুন কর্মী পাঠানো এবং দুই দেশের ফরেন সার্ভিসের উন্নয়নে দু’টি চুক্তি সই হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লা শহিদের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ফরেন সার্ভিস একাডেমির সঙ্গে এই চুক্তি সই হয়। চুক্তি সই করার আগে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহিদ ফরেন সার্ভিস একডেমিতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কর্নার ঘুরে দেখেন।
এর আগে সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে মানবসম্পদ পাঠানো এবং বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহযোগিতার বিষয়ে দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এই বৈঠক শেষে অতিথি ভবনের সবুজ লনে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় ড. মোমেন সাংবাদিকদের জানান, মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে একমত হয়েছি আমরা। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রতিবেশী দেশটির প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকে তিনি আনন্দের বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনার টিকাদান কার্যক্রম চালাতে মালদ্বীপ বাংলাদেশ থেকে কিছু নার্স নিতে চেয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক চিকিৎসক সেখানে কাজ শুরু করেছেন। একটি সুখবর হলো, দেশটির প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, মালদ্বীপে কাজ করা তাদের দেশের সব শ্রমিক, প্রবাসীসহ সবাইকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এ জন্য মালদ্বীপ সরকারকে ধন্যবাদ জানান ড. মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, যোগাযোগ, পর্যটন, জলবায়ু ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।
এছাড়া মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকার, জয়েন্ট কমিশন অন টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন, দ্বৈত কর প্রত্যাহার, বন্দি বিনিময় চুক্তি এবং আরও কিছু সমঝোতা স্মারক চূড়ান্তকরণসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
মালদ্বীপে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়ার অ্যাডমিরাল নাজমুল হাসান জানান, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
ক্ষুদ্র দেশ মালদ্বীপে প্রায় এক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে, যা দেশটিতে কর্মরত মোট প্রবাসী কর্মীর ৭০ শতাংশ। প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখানে নির্মাণ, পর্যটন, বিপণন, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যখাতসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই কাজ করেন। সম্প্রতি মালদ্বীপে বেশকিছু প্রবাসী বাংলাদেশি আনডকুমেন্টেড হয়ে পড়েছেন, যার মধ্যে অনেকে ২০১৯ সালে মালদ্বীপ সরকারের গৃহীত নিয়মিতকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ নেন।