প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌ সেক্টরের উন্নয়নের লক্ষ্যে নৌপথের সংরক্ষণ ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের সকল নদীকে দখলমুক্ত করা এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ রোববার (১৪ মে) ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নদীবন্দর স্থাপনসহ সকল নদীবন্দরকে আধুনিকীকরণ, নদীবন্দরের ঐতিহ্য, নৌ পথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, পটুয়াখালী জেলায় তৃতীয় সমুদ্র বন্দর স্থাপন, উপকূলীয় দুর্গম পথে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা চালুকরণ, কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপন, স্থল বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নসহ আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ থেকে সপ্তাহব্যাপী ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২৩’ পালন করা হচ্ছে জেনে সরকারপ্রধান আনন্দিত। এ উপলক্ষে নৌখাতের সম্মানিত নৌযান মালিক, শ্রমিক, নাবিক ও যাত্রীবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রশিক্ষিত জনবল, পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ জলযান, নৌ নিরাপত্তায় রাখবে অবদান’ সময়োপযোগী হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানে অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শত শত নদ-নদী এবং বঙ্গোপসাগরের অবাধ জলরাশি এ দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। নদীপথে মালামাল পরিবহন সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ। নদীপথেই দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের সিংহভাগ পরিবাহিত হয়। নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক পরিবহন নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের বিকাশমান অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্য ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে নৌখাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে। নৌপরিবহন খাতে প্রশিক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি নৌ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌ সেক্টরের গুরুত্ব অনুধাবন করে উন্নয়নের যে ধারা সূচনা করেছিলেন, তা অনুসরণ করে বর্তমান সরকার নৌপরিবহনের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নৌপথের উন্নয়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকার বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা- ২১০০’ গ্রহণ করেছে। দেশের স্থিতিশীল আর্থসামাজিক উন্নয়নে ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ হবে ভবিষ্যতের কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী নির্দেশিকা। জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত টেকসই উন্নয়নের সতেরোটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনার উদ্যোগকে সমন্বিত করা হয়েছে।
এছাড়াও নৌ দুর্ঘটনা হ্রাসে নদীবন্দরসমূহে নিরাপত্তা জোরদার, ত্রুটিপূর্ণ নৌযান শনাক্তকরণ, নাবিকদের প্রশিক্ষণ আধুনিকীকরণ, নৌ নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম ও আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এর ফলে নৌযান ও নৌযানে যাত্রী সাধারণের চলাচল আরও নিরাপদ হয়েছে।
তিনি আশা করেন, নিরাপদ নৌ চলাচল নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা আরও তৎপর হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি নিরাপদ নৌ-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
প্রধানমন্ত্রী ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।