নরসিংদী প্রতিনিধিঃ নরসিংদীতে আইপিএলের জুয়ায় উঠতি বয়সের যুবক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সর্বনাশ হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে। নরসিংদী জেলা শহর, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন দোকানে টেলিভিশন চালিয়ে আইপিএলের খেলা দেখানোর নামে জমজমাট এসব জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে। বিকেল থেকে দোকানগুলোতে আইপিএলের খেলা দেখানো শুরু হয়। খেলা দেখার জন্য দোকানগুলোতে শত শত লোকের ভিড় জমে। এরপরই শুরু হয় খেলা নিয়ে বাজি। দোকান মালিকরা বাজিকরের ভ‚মিকা পালন করে। বলে বলে বাজি, খেলোয়াড়ে খেলোয়াড়ে বাজি, ম্যাচে ম্যাচে লাখ লাখ টাকার বাজি হচ্ছে। অনেকে টাকার লোভে উপার্জিত টাকা, স্ত্রীর গহনা, টেলিভিশন, আসবাবপত্র বিক্রি করে বাজি ধরতে গিয়ে সম্পদ হারাচ্ছে। ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার এক মহিলা জানিয়েছেন, তার স্বামীর একটি ভালো ব্যবসা ছিল। প্রতিদিন দুই তিন হাজার টাকা আয় হতো। সে এখন আইপিএলের জুয়া খেলতে গিয়ে গত এক সপ্তাহে ৩০ লাখ টাকা হারিয়েছে। শহরের বীরপুর এলাকায় রনি দাস নামে এক ব্যক্তির দোকানে প্রতিদিন বসে আইপিএলের জুয়া খেলার জমজমাট আসর। রনি দাস নিজেই বাজিকরের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়। বলে, বলে, ওভারে, ওভারে বাজি আহবান করে রনি দাস। আর তখনই জুয়াড়িরা ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, এক লাখ টাকা করে বাজি ধরে। একটি বাজি বা বীটে ১০ লাখ, ২০ লাখ জামা পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে ১/২ জন জিতে যায়, হেরে যায় সকলে। এমনিভাবে প্রতিদিন রিকশাচালক, অটোচালক, সিএনজি চালক, কাপড়ের হকার, ফলের হকার, সবজি হকার, মাছ ব্যবসায়ীসহ ব্যবসায়ীরা এই জুয়া খেলায় অংশ নিয়ে দিনের পর দিন টাকা হারাচ্ছে। গত কিছুদিন আগে এক শিক্ষক আইপিএলের জুয়া খেলে ৪০ লাখ টাকা হেরে যায়। এতে ঋণ গ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এই জুয়ার টাকা দিতে না পারায় বাজিকর ও জুয়াড়িদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় ওই জুয়াড়ি শিক্ষক ঋণদাতা সংস্থার নিকট থেকে কিস্তি নিয়ে জুয়ার টাকা পরিশোধ করতে হয়।
এমনিভাবে প্রতিদিন শত শত মানুষ আইপিএল জুয়া খেলার খপ্পরে পড়ে জীবনের কষ্টার্জিত সম্পদ হারাচ্ছে। নরসিংদীর বীরপুর, বানিয়াছল, বৌয়াকুড়, রাঙ্গামাটি, সাটিরপাড়া, ব্রাহ্মণপাড়া, দত্তপাড়া, ভেলানগর তড়োয়া ইত্যাদি এলাকায় এইসব আইপিএল জুয়া খেলার জমজমাট আসর বসছে। আর এইসব জুয়া খেলার আসরে যোগ দিচ্ছে স্কুলকলেজের ছাত্র যুবক বয়সের ছেলেরা। এখনই এই জুয়া খেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ না করলে অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।