জামিরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার (নাটোর জেলা) : উত্তরাঞ্চলের জনপদে শীতের আগমনী বার্তা শীত মৌসুমকে সামনে রেখে নাটোরের লালপুরে খেজুরের গাছ প্রস্তুত ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করেছেন মৌসুমী গাছিরা। শীতকাল এলে বাড়ে খেজুর গাছের কদর। এই সময় গ্রামীণ জীবনে খেজুর গাছকে ঘিরে শুরু হয় জীবিকা নির্বাহের উৎস তাই খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি হিসেবে গাছের ডাল ও শাখা-প্রশাখা কেটে পরিষ্কার করছেন গাছিরা।
স্থানীয়রা বলেন, লালপুরে মধুবৃক্ষ খেজুরের গাছ একটি অন্যতম সম্পদ। শীত মৌসুমের শুরুতে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয় সুস্বাদু খেজুরের পাটালি গুড়। মধুবৃক্ষ খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে লালপুর উপজেলার খ্যাতি দেশ জুড়ে। এ অঞ্চলের খেজুর গুড়ের পাটালি রাজশাহী, ঢাকা, চাঁপাই, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। তাইতো অবহেলায় বেড়ে উঠা খেজুরের গাছের কদর এখন অনেক বেশি। সকাল থেকে শুরু হয় খেজুর গাছ প্রস্তুতের কাজ। আর কিছুদিন পর এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহের পালা শুরু হবে। গাছ ঝোড়া ও রস সংগ্রহকে ঘিরে এই জনপদের শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লালপুরপ সড়ক, রেললাইনের দুই ধার, জমির আইল, বাড়ির আঙিনাসহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার খেজুর গাছ, প্রতি গাছ থেকে মৌসুমে প্রায় ২৫ কেজি গুড় উৎপাদন করা হয়। এবছর উপজেলায় গুড় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭,২৫০ মেট্রিক টন। শীত মৌসুমে প্রায় ২ হাজার পরিবার খেজুরগাছের ওপর নির্ভরশীল। খেজুরের গাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না। তাই এ গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। ঝোপ, জঙ্গলে কোনো যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে খেজুরের গাছ। শুধুমাত্র শীত মৌসুমে নিয়মিত পরিষ্কার করে রস সংগ্রহ করা হয়।
সরেজমিনে উপজেলার মোহরকয়া, মোমিনপুর, মহারাজপুর, হাসিমপুর,রায়পুর, সাধুপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, খেজুরগাছ পরিষ্কার করতে বেশ ব্যস্ত গাছিরা। খেজুরগাছের কাঁটাযুক্ত ডাল কেটে নতুন কাঠ সাদা অংশ বের করছেন তাঁরা, ইতিমধ্যে কেউ কেউ আবার রস সংগ্রহ শুরু করেছে।
বিলমড়ীয়ার মোহরকয়া গ্রামের গাছি মুনসুর রহমান (৪০) বলেন, খেজুরগাছের কাঠ পরিষ্কার করে চেঁছে ১০ দিন শুকাতে হয়। এরপর বিশেষ কৌশল করে কিছু অংশ বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে রস সংগ্রহে ও মাটির হাঁড়ি বসানোর জন্য বাঁশের তৈরি কাঠি লাগানো হয়। গাছ থেকে রস বের করার জন্য প্রতিদিন কাঠের কিছু অংশ চেঁছে ফেলতে হয়। একাধারে তিন দিন শুকাতে হয়। শুকনা কাঠির রস খেতে সুমিষ্ট হয়।
আরেক গাছি নাগশোষা গ্রামের সেন্টু আলী (৫২) বলেন, তিনি প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে পারেন। একজন গাছি শীত মৌসুমে প্রায় ৩ মাসে একটি গাছ থেকে ২০-২৫ কেজি গুড় সংগ্রহ করেন।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, নিরাপদ গুড় উৎপাদন এবং বাদুড় থেকে খেজুরের রসের মাধ্যমে সংক্রমিত নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে গাছের পাত্র ঢেকে রেখে নিরাপদ গুড় উৎপাদনে কৃষি বিভাগ নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।