রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে মিছিলে অংশ নেওয়া তিন হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে রাশিয়া। আজ রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
নাভালনির মুক্তির দাবিতে গতকাল শনিবার দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে অংশ নিতে হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসে। তীব্র শীত ও পুলিশি সতর্কতা উপেক্ষা করে তারা রাস্তায় নামে। নাভালনি-সমর্থক বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বেধড়ক পিটুনি দেয় পুলিশ। আটক করে ৩ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে।
ওভিডি ইনফো নামের একটি স্বাধীন এনজিও রাশিয়ায় বিক্ষোভ-সমাবেশ পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ওভিডি ইনফোর ভাষ্য, গতকাল রাশিয়াজুড়ে ৩ হাজার ২৯৬ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার ২৯৪ জনই রাজধানী মস্কোয় আটক হয়েছে।
চিকিৎসা শেষে গত রোববার জার্মানি থেকে রাশিয়ায় ফেরেন ৪৪ বছর বয়সী নাভালনি। মস্কোয় পা রাখামাত্র তাঁকে গ্রেপ্তার করে রুশ পুলিশ। পরে তাঁকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নাভালনি বিক্ষোভের ডাক দেন।
গতকালের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া থেকে লোকজনকে বিরত রাখতে সতর্ক করেছিল রুশ কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভে অংশ নিলে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি আছে বলে উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অবৈধ কর্মসূচিতে অংশ নিলে বিচার-জেল-জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে বলে তারা হুমকি দিয়েছিল। তবে বিক্ষোভকারীরা এই হুমকি উপেক্ষা করে নাভালনির মুক্তির দাবিতে রাজপথে নেমে আসে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মস্কোর কেন্দ্রস্থলে প্রায় ৪০ হাজারের মতো বিক্ষোভকারী জড়ো হয়। গত কয়েক বছরের মধ্যে মস্কোয় গতকালই পুতিনবিরোধীদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হলো। পুলিশ গণহারে বিক্ষোভকারীদের ধরে ধরে পুলিশ ভ্যানে তোলে।
নাভালনির এক সহযোগীর ভাষ্য, রাজধানী মস্কোয় ৫০ হাজারের মতো বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিল।তবে রুশ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, মস্কোয় হাজার চারেক বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিল।বিক্ষোভ চলাকালে নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়াকেও আটক করা হয়েছিল। তবে পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।বিক্ষোভের আগে-পরে নাভালনির বেশ কিছু রাজনৈতিক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে কর্তৃপক্ষ।ওভিডি ইনফোর ভাষ্য, নাভালনির সমর্থনে গতকাল রাশিয়ার অন্তত ১০০টি শহর-নগরে বিক্ষোভ হয়।
বিক্ষোভকারীরা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তারা স্লোগানে স্লোগানে নাভালনির মুক্তি দাবি করে।নাভালনির সহযোগী লিওনিড ভলকভ আগামী সপ্তাহান্তেও বিক্ষোভকারীদের একইভাবে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।নাভালনির সমর্থক বিক্ষোভকারীদের মারধর ও আটকের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে রূঢ় কৌশল ব্যবহার করছে রাশিয়া। তারা এখনই নাভালনির শর্তহীন মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে নাভালনি পরিচিত।
গত বছরের আগস্টে সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে মস্কোয় যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাভালনি। প্রথমে তাঁকে সাইবেরিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে যান।
নাভালনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। বার্লিনে চিকিৎসা নিয়ে ধীর ধীরে সেরে ওঠেন তিনি। মাস কয়েক বার্লিনে থাকার পর নিজ দেশে ফেরেন তিনি।নাভালনিকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে জানান চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, নাভালনিকে সোভিয়েত আমলে তৈরি নার্ভ এজেন্ট নোভিচক প্রয়োগ করা হয়েছিল।
নাভালনি ও তাঁর সহযোগীদের অভিযোগ, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশেই তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল।তবে নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন।রাশিয়ায় নাভালনিকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা নাভালনির দ্রুত মুক্তি দাবি করেছে।
সূত্র : বার্তা সংস্থা রয়টার্স