1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন

নারী নির্যাতন মামলা : তদন্তে বছর পার, অধিকাংশের নিষ্পত্তি নেই

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা যে হারে বাড়ছে সে অনুযায়ী নিষ্পত্তি হচ্ছে না। মামলায় পুলিশি তদন্তের রিপোর্ট দেওয়া ও আদালতে সাক্ষী হাজির করতে লাগছে বছরের পর বছর। দ্রুত বিচার না পেয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগী পরিবার। মানবধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিচারের এই ধীরগতিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেখতে পেয়ে, অপরাধ করতে সাহস পাচ্ছে আরও অনেকে।
২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর। পার্বতীপুর উপজেলার জমিরহাট তকেয়াপাড়ার শিশু পূজা রানী (৫) বাড়ির সামনে রাস্তায় গ্রামের অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলা করছিল। পূজার খেলার সাথী রেশমার বাবা সাইফুল ইসলাম পূজাকে ফুঁসলিয়ে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তারপর শিশুটির ওপর চালায় বর্বর নির্যাতন।
ঘটনার পর পূজার বাবা সুবল চন্দ্র দাস ২০ অক্টোবর ২০১৬ সালে দিনাজপুরের পার্বতীপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন কবিরাজ। মামলার চারদিন পর দিনাজপুর শহর থেকে সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে অন্য আসামি আফজাল হোসেন কবিরাজকেও গ্রেফতার করা হয়। মামলাটি এখনও দিনাজপুর নারী শিশু ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন (নারী ও শিশু মামলা নম্বর ১৪৯/১৭)।
এ ঘটনায় ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে চার্জশিট দেয় পুলিশ। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ৮ নভেম্বর ২০১৭ সালে। মামলাটি গত তিন বছর ধরে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। ২ ডিসেম্বরও সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে। আর এদিন হবে সাক্ষ্যগ্রহণের ১৬তম তারিখ।
শুধু পূজার এ মামলা না, এমন শত শত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলা ঝুলে আছে বছরের পর বছর। ঝুলে থাকা মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে না দেখেই অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে অনেকে, এমনটাই মনে করছেন নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ‘আমরাই পারি জোট’ বলছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ধারা ২০(৩) এ বলা আছে বিচারের জন্য মামলার প্রাপ্তির তারিখ হতে ১৮০ দিনের মধ্যে ট্রাইব‌্যুনাল কার্য শেষ করতে হবে। গত ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি জে.বি.এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০-এর অধীন সমস্ত মামলাগুলো ট্রাইব্যুনাল ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশনা দেন। কিন্তু এখনও বহু মামলার ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এসব মামলার রায় হতে দেরি হচ্ছে বলেই নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তি করার প্রধান বাধা তদন্ত সংস্থা ও তদন্ত প্রতিবেদন। প্রভাবমুক্ত তদন্ত প্রতিবেদন আমরা পাই না। বারবারই বলে আসছি, একটি স্বাধীন পৃথক তদন্ত সংস্থার প্রয়োজন। যা সুপ্রিমকোর্টের অধীনে থাকবে। তখন দেখবেন কোনও রাঘববোয়াল পার পাবে না। কেউ অপরাধ করার আগে শতবার ভাববে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার বিচারকাজ পরিচালনার জন্য ট্রাইব‌্যুনাল ঢাকা ১, ২, ৩, ৪, ৫ কাজ করেন। যেখানে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল ঢাকা-১ এ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০১৭ সালে ৬ হাজার ২২৭টি মামলা আসে। ২০২০ সালে এসেও ২ হাজার ৯০২টি মামলা পেন্ডিং রয়েছে। ঢাকা-২ এ ২০১৭ সালে মোট মামলা আসে ৫ হাজার ২৭২টি, বিচারাধীন ৯৪৭টি। একইভাবে ঢাকা-৩ এ একই বছর মামলা আসে ৫ হাজার ৯৩২টি বিচারাধীন ১ হাজার ১০৪টি। ঢাকা-৪ এ মামলা আসে ৬ হাজার ৮২৯টি, বিচারাধীন ৩ হাজার ৭২৩টি। ঢাকা-৫ এ মামলা আসে ৬ হাজার ১০১টি, বিচারাধীন ২ হাজার ৩৯৪টি মামলা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল ফারহানা আফরোজ বলেন, তদন্ত হতে দেরি হওয়া, ভুল রিপোর্ট দেওয়া, মেডিক্যাল রিপোর্টে অতিরিক্ত সময় লাগা, ঘটনাস্থলের দূরত্ব, আসামির পালিয়ে যাওয়া, পুলিশ সদস্যদের বদলি, নির্যাতনের শিকার মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের আর্থসামাজিক অবস্থান; ইত্যাদি কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার নিষ্পত্তি হতে দেরি হয়।
তিনি বলেন, যে সমস্যাটি বেশি দেখা যায় সেটা হলো তদন্ত রিপোর্ট। সেখানেই অনেক সময় চলে যায়। মেডিক্যাল রিপোর্ট তো আসেই না সহজে। সব মিলেয়ে একটি মামলা শেষ হতে অনেক সময় লাগে।
প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করেন বরিশালের জেলা জজ আদালতের নারী ও শিশু মামলা নিয়ে কাজ করা অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ বাচ্চু। তিনি বলেন, বরিশালে একটি ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের মামলার বিচারকাজ চলে। দেড় হাজারের মতো মামলা জমে আছে এই আদালতে। আমি একটি নির্যাতন মামলা নিয়ে কাজ করছি। মামলাটি হয় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের ৮ তারিখে ১৯তম সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে। আদালতের থেকে ১ কিলোমিটার দূরে সাক্ষী ব্যবসা করেন। পুলিশ সাক্ষীকে আনতে পারে না আদালতে। পুলিশ না গিয়েই বলে সাক্ষীকে পাওয়া গেলো না। এভাবেই ঝুলে থাকে নারী নির্যাতন মামলা।
পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন কেন ধীরগতি জানতে চাইলে বাংলাদেশের পুলিশের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, তদন্তে নয়, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো অন্য জায়গায় আটকে থাকে। পুলিশকে বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে। প্রতিটি থানায় নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য স্পেশাল ডেস্ক রয়েছে যারা এটা নিয়ে কাজ করে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এটা ঠিক কিছু কিছু ঘটনায় আমরা ঠিক সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারিনি। তবে এখন বহু থানাতেই দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট হচ্ছে। সময়মতো সাক্ষীর হাজির না হওয়া কিংবা পরিবারের মেডিক্যাল টেস্ট করাতে অসম্মতি, এসব ঘটনাও পুলিশের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’
সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা আরও জানান, ‘ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সেবা আমরা চালু করেছি। নতুন আরেকটি অ্যাপস নিয়ে কাজ চলছে। যখন কোনও নারী বা শিশু নিজেকে অনিরাপদ মনে করবেন, অ্যাপসের নির্ধারিত বাটন চাপলেই ওই লোকেশনে পুলিশ চলে যাবে।’
দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জাজ গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। কেননা ট্রাইব‌্যুনালের সংখ্যা অনুযায়ী মামলার চাপ বেশি। একটি ট্রাইব‌্যুনালে ১৫০০-২০০০ মামলা থাকে। আবার মামলার চার্জশিট অনুযায়ী সাক্ষী পাওয়া যায় না। থাকলেও তাদের সময়মতো হাজির করা সম্ভব হয় না।’
এই সিনিয়র বিচারক আরও বলেন, ‘আর্থিক লাভ থাকে না বলে অনেক সাক্ষী আসতে চান না। ট্রাইব‌্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সাক্ষীর জন্য বাজেট রাখতে পারলে মামলাগুলো পড়ে থাকবে না বলে আমার মনে হয়।’

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি