শেরপুরঃ আমারে কইছে ঘর দিমু। তুই মাটি কাইটা দে। আমি মাটি কাইটা দিছি। পানি দিছি। মেলা কষ্ট করছি। চেয়ারম্যান, মেম্বাররাও কইছে তোর লাইগা সুপারিশ করছি। তোরে ঘর দেব। পাকা ঘর অইলো। আমারে দিলো না। অহন মানষের বাড়িতে থাহি’। কথাগুলো বলছিল শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের গড়ের বাজারের পাশে খামারবাড়ির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শান্ত (১৪) নামে এক শিশু।
সে জানায়, ৭/৮ বছর আগে তার বাবা মারা গেছে। পরে তার মা ছোট বোনকে নিয়ে নানার বাড়ি চলে যায়। বছর দেড়েক আগে তার মা অন্যত্র বিয়ে করে ঘর বেঁধেছে। এখন তার দিন কাটে খেয়ে না-খেয়ে। রাতে থাকতে হচ্ছে অন্যের বাড়ি।
স্থানীয়রা জানান, এখানে ঘর ছিল। এ ঘরেই তার জন্ম। বড় হয়েছে এখানেই। অথচ ওই ঘর ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হতদরিদ্রদের জন্যে বরাদ্দকৃত অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে পাকা ঘর। কিন্তু ওই পাকা ঘরে তার ঠাঁই হয়নি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। নিজগৃহে পরবাসী দৃষ্টিপ্রতিবন্দ্বী শান্ত। ২৩ এপ্রলি বৃস্হপ্রতিবার সরেজমিন গেলে ওই শিশু ও তার প্রতিবেশীরা এভাবেই তুলে ধরেন তার ভিটেমাটি হারানো আর দুঃসহ জীবনের গল্প।
জানা যায়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শান্তর বাবা আফছার আলী ছিল খামারবাড়ির বাসিন্দা। তিনি পৈতৃক সূত্রে এক খণ্ড জমিতে দোচালা একটি টিনের ঘরে বসবাস করতেন। দিনমজুরি করে চালাতেন সংসার। গত ৭/ ৮ বছর আগে দুই সন্তান রেখে মারা যান আফছার আলী। এরপর আফছারের স্ত্রী বিধবা ছাহেদা খাতুন কিছুদিন সেখানে ছিলেন। অবশেষে অভাবের তাড়নায় ছেলে শান্তকে রেখে ছোট মেয়ে সাথীকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান। শান্ত মাঝে মধ্যে মায়ের কাছে যেত। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় সে পথও এখন বন্ধ। শান্তর নানাও দরিদ্র। সেখানেও তার ঠাঁই হয়নি। তাই বাবার রেখে যাওয়া ঘরে থাকত সে। পেট চালাত চেয়েচিন্তে। সহায়তা করত তার কাকা, কাকি আর প্রতিবেশীরা। পড়ালেখার সুযোগ তার কখনোই হয়নি।
গত বছর অসহায় দরিদ্র ও ভূমিহীনদের জন্যে বরাদ্দ আসে প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি করে পাকা ঘর। ওই বাড়িতে শান্তসহ বসবাস করত ৪টি পরিবার। এর মধ্যে ছিল শান্তর ঘর। বলা হয়েছিল তাকে পাকা ঘর দেওয়া হবে। সেখানে নির্মাণ হয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ৬টি পাকা ঘর। ঘর পাবার আশায় শান্ত ভিটের মাটি কাটা ও পানি দেওয়ার কাজ করেছে। তবে তাকে ঘর দেওয়া হয়নি। এসব ঘর তুলে দেওয়া হয় অন্যদের। নিজভূমে পরবাসী হয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শান্ত।
শান্তর কাকা সোলায়মান বলেন, ‘শান্ত চোহে দেহে না। কোনো কাজকামও করতে পারে না। কোনোমতে চলতে পারে। ওর অহন থাহার ঘর নাই’।
কাকিলাকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান হামিদউল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘ওই শিশু যাতে ঘর পায়, এ জন্য সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু ঘর দেয় নাই। অথচ ওই খানে তার ঘর ছিল’।
কাকিলাকুড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসার আতিকুর রহমান বলেন, ‘সে শিশু। এ জন্য তাকে ঘর দেওয়া হয়নি। ঘর পেতে হলে পরিবারের আরো সদস্য থাকতে হবে’।