নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা কমছে। বিদ্যমান আইনে নানা অনিয়মের কারণে নির্বাচনের যেকোনও পর্যায়ে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে ইসির। এই ক্ষমতা সীমিত করে শুধু ভোটগ্রহণ বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় সংসদের কোনও আসনের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। এক্ষেত্রে কেবল যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, শুধু সেসব কেন্দ্রের ভোট স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে।
এসব বিধান রেখে জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ করে বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তবে তার আপত্তি কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে আইনমন্ত্রী বিলটি সংসদে তোলেন।
জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন যদি সন্তুষ্ট হয় যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যেকোনও ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনের যেকোনও পর্যায়ে ভোটগ্রহণসহ নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।’
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করার পর ইসি ওই ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারে কিনা, তা নিয়ে মতদ্বৈধতা আছে।
এ কারণে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য ইসি একটি বিধানের সঙ্গে আরেকটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা প্রস্তাবে বলেছিল, কোনও অনিয়ম, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এলে নির্বাচন কমিশন কোনও ভোটকেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে, কোনও কেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোট বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন করতে পারবে।
তবে ইসি পুরো আসনের ফলাফল স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে না। সংশোধনীতে বলা হয়েছে—যেসব ভোটকেন্দ্রে (এক বা একাধিক) অভিযোগ থাকবে, ইসি শুধু সেসব কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করে প্রয়োজনে নতুন নির্বাচন করতে পারবে।
এর পাশাপাশি আরপিওর ৯১(এ) ধারায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধনীতে আরপিও’র ৯১ ধারার ‘এ’ উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ইলেকশন শব্দ দিয়ে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া বোঝায়। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা (গেজেট প্রকাশ) পর্যন্ত সময়টা ইলেকশন। আর পোলিং হলো শুধু ভোটের দিন। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন এখন শুধু ভোটের দিন অনিয়মের কারণে কোনও কেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু ইলেকশন শব্দটি থাকলে ভোটের আগেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসি ভোট বন্ধ ঘোষণা করতে পারতো। তাই এখানে তাদের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে।
অবশ্য কমিশনের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, সংশোধনীতে ইসির ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতদিন আইনের এই ধারাতে অস্পষ্টতা ছিল। এখন কোন কোন ক্ষেত্রে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।