1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

নীতিমালা জারি হলেও এখনই এমপিও নয়

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১

অনেকটাই শিক্ষববান্ধব করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি ও জনবল কাঠামোর নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এখনই নতুন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। এ খাতে বরাদ্দ না থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নীতিমালার সুফল ভোগ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন  বলেন, চলতি অর্থবছরের আর মাত্র ৩ মাস অবশিষ্ট আছে। এ সময়ে আবেদন নিয়ে দাপ্তরিক কাজ শেষ করে এমপিও দেওয়া সম্ভব হবে না। এছাড়া নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির খাতে বর্তমানে কোনো বরাদ্দ নেই। তবে এটাও ঠিক, এ খাতে কখনোই আগে থেকে বরাদ্দ থাকে না। রাজনৈতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলে পরে বিশেষ বরাদ্দ হয়ে থাকে। তিনি বলেন, এসব কারণে এ অর্থবছরে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সম্ভাবনা কম। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হলে আগামী অর্থবছরে এ কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৩ ধরনের স্কুল এবং কলেজ এমপিওভুক্তির নীতিমালা জারি করে। ৪৪ পৃষ্ঠার এ নীতিমালায় অনেক নতুন বিষয় আনা হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে দুটি করে ট্রেডে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। সেই পদও সংরক্ষণ করা হয়েছে। মফস্বলের প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস সহায়কের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এমনিভাবে লক্ষাধিক পদ সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া শিক্ষকদের পুঞ্জীভূত দীর্ঘদিনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- সহকারী প্রধান শিক্ষকদের পদে নিয়োগ জটিলতা। আগে ১০ বছর সহকারী শিক্ষক আর ৫ বছর সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেও কেউ প্রধান শিক্ষক হতে পারতেন না শুধু ১২ বছরের সহকারী শিক্ষকের অভিজ্ঞতা নেই- এমন বাধার কারণে।

এখন এক্ষেত্রে বলা হয়েছে- ন্যূনতম তিন বছরের সহকারী প্রধানসহ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেই প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করা যাবে। ডিগ্রি ও অনার্স কলেজে অধ্যক্ষ পদে প্রায় একই ধরনের শর্ত রয়েছে। সহকারী অধ্যাপক হিসাবে তিন বছর কর্মরত থাকতে হবে। সবমিলে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা লাগবে। তবে শিক্ষাজীবনে একটি করে তৃতীয় শ্রেণিকে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে। এটিকে অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন।

আগে বেসরকারি শিক্ষকরা উৎসব ভাতা পেতেন বেতনের অর্ধেক আর কর্মচারীরা ২৫ শতাংশ। এখন সবাই শতভাগ বোনাস পাবেন। এতে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সদস্যসচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, নতুন এমপিও নীতিমালা অনেকটাই শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব হয়েছে। শতভাগ উৎসব ভাতা, শিক্ষকদের বদলি, মাধ্যমিকে বিজ্ঞানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকসহ বিভিন্ন ধরনের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। এ নীতিমালায় সেসব পূরণ করা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা পদোন্নতি পেয়ে চাকরির ১০ বছর বয়সে সিনিয়র শিক্ষক হবেন। এছাড়া পরবর্তী ছয় বছরে উচ্চতর স্কেলে বেতন পাবেন। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) প্রভাষকরা হবেন সিনিয়র প্রভাষক। তাদের বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক বলা হয়। এটা এখন থেকে শুধু কলেজ শিক্ষকদের বলা হবে। তবে সিনিয়র প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপকদের বেতন স্কেল একই থাকবে।

নিয়োগের ৫ বছরের মধ্যে শিক্ষায় ডিগ্রি নিতে হবে। যাদের এখন এ ডিগ্রি নেই তাদেরও ৫ বছরের মধ্যে নিতে হবে। আর ডিগ্রি কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেওয়া যাবে না। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ থেকে নেওয়া যাবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো কারণে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও শিক্ষকদের চাকরি যাবে না। তাদের পাশের বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শূন্যপদে নিয়োগ করা হবে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা সাপেক্ষে বেসরকারি শিক্ষকরা বদলি হতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে শূন্যপদ ও দুই প্রতিষ্ঠানের সম্মতি লাগবে। তবে এ দিকটি নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা, অপেক্ষাকৃত ভালো প্রতিষ্ঠানে বদলির হিড়িক পড়তে পারে।

নীতিমালায় আরও কিছু ইতিবাচক দিক যুক্ত হয়েছে। এনটিআরসিএর মাধ্যমে সব ধরনের শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। শিক্ষক চাহিদা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে আসতে হবে। আর ভুল চাহিদার জন্য এ তিন স্তর দায়ী থাকবে। এমপিওভুক্তি করা হবে বিশেষায়িত কমিটির মাধ্যমে।

স্কুলে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিজের বিষয়ের বাইরে আরও দুটি বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে। স্কুল-কলেজে আলাদা শিফটের শিক্ষকদের এমপিও দেওয়া হবে। তবে তাদের আলাদা ছাত্রছাত্রী, পাশের হার থাকতে হবে। অন্য শিফটের শিক্ষার্থী ও পাশের হার দেখানো যাবে না।

কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রাঞ্চ খুলতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। বর্তমানে প্রাপ্যতার বাইরে যারা নিযুক্ত আছে তাদের চাকরি থাকবে। কিন্তু জনবল কাঠামোর মধ্যে কোনো পদ শূন্য হলে তাতে অতিরিক্তরা নিয়োগ পাবেন।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, নীতিমালা ভালো হলেও বেশকিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এছাড়া কিছু সংকটও আছে। ডিগ্রি স্তরের তৃতীয় শিক্ষকরা এবং অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা এমপিও পান না। এ নীতিমালায় তাদের যুক্ত করা হয়নি। নতুন নীতিমালায় স্কুলপর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণ সহজ করা হলেও কলেজ পর্যায়ে কঠিন করা হয়েছে।

শিক্ষকরা অধ্যাপক পর্যন্ত পদোন্নতি চাইলেও সহকারীতেই সীমিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকে জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের পর আর কোনো পদোন্নতি নেই। গ্রন্থাগারিক ও সহকারী গ্রন্থাগারিকদের দেওয়া হয়েছে শিক্ষকের মর্যাদা। কিন্তু অনেকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ বলে জানা গেছে। কয়েক বছর ধরে শিক্ষকরা এমপিও নীতিমালা সহজ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

সে অনুযায়ী, চারটির পরিবর্তে তিনটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এগুলো হলো- শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থী সংখ্যা এবং পাশের হার। আগে প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির মেয়াদের ওপর ২৫ নম্বর ছিল। সেটি আর নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ছাত্র সংখ্যায় কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে।

২০২১ সালের নীতিমালা অনুযায়ী, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পেতে নিু মাধ্যমিকে শহরে ১২০ ও মফস্বলে ৯০, মাধ্যমিকে শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহরে ৪২০ ও মফস্বলে ৩২০, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে শহরে ২৫০ ও মফস্বলে ২২০ এবং ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে শহরে ৪৯০ ও মফস্বলে ৪২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে।

পাশের হার স্তর ভেদে সর্বনিু ৪৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন এমপিও পেতে ১০০ নম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ এবং পাশের হারে ৪০ নম্বর রাখা হয়েছে। সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী ছিল, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পেতে নিু মাধ্যমিকে শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০ জন শিক্ষার্থী, মাধ্যমিকে শহরে ৩০০ ও মফস্বলে ২০০, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহরে ৪৫০ ও মফস্বলে ৩২০, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০ এবং ডিগ্রি (স্নাতক পাস) কলেজে শহরে ২৫০ ও মফস্বলে ২০০ শিক্ষার্থী থাকতে হবে। আর পাশের হার হতে হবে ৭০ শতাংশ।

সূত্র : যুগান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি