সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ডাঙ্গাপাড়া থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত এলজিইডির ৫ কিলোমিটার রাস্তার মেরামতের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজ শেষ হতে না হতেই কাপের্টিং উঠে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় কাপের্টিং উঠে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।
এদিকে, নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করায় নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে সাইটের তদারকিতে থাকা কর্মকর্তা ওই গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র বিশ্বাসকে (১৮) পুলিশের হাতে তুলে দেন। সে ওই এলাকার এমদাদুল হকের পুত্র।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিতাই ডাঙ্গাপাড়া থেকে নিতাই ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রাস্তার মেরামত কাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে কার্যাদেশ পায় ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুনাম এন্টারপ্রাইজ।
গত ২৪ মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে দেড় কিলোমিটারের কাজ শেষ করে। অবশিষ্ট কাজ বৃষ্টির কারণে বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই নিতাই ডাঙ্গাপাড়ার রাস্তাটির কাজের ৮ থেকে ১০টি স্থানে কাপের্টিং উঠে যায়।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুনাম এন্টার প্রাইজের কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কাজ নেয়া মোশারফ হোসেন ও তদারকি কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান নিজেদের দায় এড়াতে রোববার সন্ধ্যায় বিশ্বাসকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরের দিন পুলিশ তাকে ১৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে নীলফামারী জেল হাজতে পাঠায়।
এলাকার বাসিন্দা হেলাল সরকার সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার ও তদারকি কর্মকর্তা নিম্নমানের কাজ করায় এ ঘটনা ঘটেছে।
এলাকার আব্দুল বারিক, তরিকুল ইসলাম বলেন, নিম্নমানের কাজ করার সময় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেছিলো। কিন্তু ঠিকাদার মোশারফ হোসেন ক্ষমতাসীন দলের লোক বলে আমাদের অভিযোগ পাত্তা দেয়নি। রাস্তা মেরামত কাজে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। ওই ঠিকাদারের রাস্তার কাজের সব উপকরণ ছিলো নিম্নমানের।
ঠিকাদার মোশারফ হোসেন বলেন, এলাকার কয়েকজন লোক চাঁদা চেয়েছিলো। তা না দেয়ায় তারা রাস্তার কাপের্টিং তুলে ফেলেছে। তদারকি কর্মকর্তা সাব-এসিটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সাজেদুর রহমান নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করার কথা অস্বীকার করে বলেন, এলাকার কয়েকজন বখাটে ছেলে রাস্তার কাজের টাকা না পেয়ে কাপের্টিং তুলে ফেলেছে।
অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রউফের অফিসে দেখা না পেয়ে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল বলেন, বিশ্বাসকে ১৫৪ ধারা মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে পার্শ্ববর্তী সৈয়দপুর উপজেলার গ্রামাঞ্চলের সড়ক সংস্কারেও দায়সারাভাবে কাজ করছে ঠিকাদাররা। এলাকাবাসী নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করলে সরকারী কাজে বাধা দেয়ায় পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে পেঁদানি দেয়া হবে বলে ভয় দেখানো হয়েছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের নিজামের চৌপথী এলাকায়। পরে ঠিকাদার ও এলজিইডি’র প্রকৌশলী পুলিশের উপস্থিতিতে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কোন রকমে রাস্তার কার্পেটিং তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করেছে। বর্ষার সময় চৌপথী থেকে কামারপুকুর ধলাগাছ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তাও কিশোরগঞ্জের মত পরিস্থিতি হবে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।
এব্যাপারে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলীয় নেতারা নির্বিকার। জনগন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্তব্যের ঝড় উঠলেও দায়িত্বশীলরা এখনও কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সৈয়দপুর এলজিইডি’র প্রকৌশলীরা ঠিকাদারদের কাছে জিম্মি বা বিক্রি। ঠিকাদার মাসুদুল ইসলাম দুলাল নীলফামারী সদরের এক আ’লীগ নেতার আত্মীয় হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথা বলতে নারাজ সবাই।