শাহীন আলম বিশেষ প্রতিনিধি:
সরকারের পদত্যাগ ও নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। সঙ্গে রয়েছে জামায়াতে ইসলামও। তাদের টানা অবরোধ-হরতাল কর্মসূচিতে রাজধানীসহ সারাদেশেই যানবাহন কম চলেছে। তবে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) অবরোধ কর্মসূচি না থাকলেও রাজধানীতে সে রেশ রয়ে গেছে। সকালের দিকে মূল সড়কগুলোতে গাড়ির যে চাপ দেখা গেছে তা দুপুরের পরে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহিংসতার ভয়ে সকালে ট্রিপ দিয়ে অনেকে বিকেলে বাস বের করছে না। এদিকে গাড়ি কম থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি, গুলিস্তান, পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, শাহাবাগ, কারওয়ানবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, বিশ্বরোড, বনানী, উত্তরা, ধানমন্ডি, মিরপুর রোডে গাড়ির বেশ চাপ ছিলো বলে জানিয়েছে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম। তবে সে চাপ দুপুরেরর পর থেকে কমতে শুরু করেছে। অধিকাংশ সড়কে দেখা গেছে, গাড়ি কম যাত্রী বেশি। আবার কোথাও কোথাও দীর্ঘ সময় গাড়ির জট লেগে থাকার দৃশ্যও দেখা গেছে।
এদিন দুপুর দুইটার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত গাড়ির জট লেগে ছিলো। ওইদিকে গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ি, সদরঘাট যাত্রাপথে প্রচুর গাড়ির চাপ দেখা গেছে। তবে যাত্রাবাড়ি থেকে শাহাবাগ কিংবা বিজয়নগর হয়ে কাকরাইল বের হওয়ার পথ ছিলো একেবারেই ফাঁকা। আবার পল্টন, মৌচাক, মালিবাগ সড়কেও গাড়ি কম দেখা গেছে।
মনজিল ট্রান্সপোর্টের চালক জসিম উদ্দীন সংবাদ সারাদেশকে জানান, সকালে স্কুল খোলা থাকায় গাড়ির চাপ বেশি ছিলো। প্রতি অবরোধের আগের দিন যেভাবে গাড়িতে আগুন দিচ্ছে তাতে গাড়ি নিয়ে তো বের হতে ভয় লাগে। মানুষসহ আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সেজন্য সবাই সকালে কয়েক ট্রিপ দিয়েই বন্ধ করে দিয়েছে হয়তো।
মিরপুর রোডে চলাচলকারী বাস ট্রান্সসিলভার চালক মজিবুর রহমান বলেন, ‘মালিক গাড়ি নামাতে বলেন, তার তো বিমা করা থাকে। আমাদের তো তা নেই। জানের মায়া আছে আমাদের। সকালে ৪ ট্রিপ মারছি। আজ আর না ‘
মৌমিতা গাড়ির যাত্রী মাহমুদ উল্লাহ বলেন, ‘অবরোধের কারণে বাস কম চলে, অতিরিক্ত পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। তবে রাস্তাঘাট এখনও ফাঁকা এটাও একটা স্বস্তির বিষয়।’
একদিকে জ্যাম। আবার অন্যদিকে ফাঁকা সড়কও দেখা গেছে। গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় অনেককে বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কাউকে কাউকে পায়ে হেঁটে, রিকশায় বা বাইকে গন্তব্যের দিকে রওনা দিচ্ছেন। তবে যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হয়েছেন, কোনও রকম ঝামেলা ছাড়াই তাদের চলাচল করতে দেখা গেছে।
প্রেসক্লাবের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাসুদুর রহমান। তার মতে যানজট হলেও সমস্যা, আবার গাড়ি কম থাকলেও সমস্যা। তিনি বলেন, ‘সেগুনবাগিচা অফিস। প্রতিদিন বাসেই যাই। অবরোধের জন্য গাড়ি এমনিতেই কমে গেছে। আজ অবরোধ নেই। তারপর এ লাইনের বাস কম। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি বাসের দেখা নেই।
ট্রাফিক পুলিশ বলছে, স্বাভাবিক সময়ে কর্মদিবসে রাস্তায় গাড়ির যে চাপ থাকে, সেটা এখন দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে বাসের সংখ্যা কম। এ জন্য সড়ক কিছুটা ফাঁকা। অনেকে আতঙ্কে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন না। তাছাড়া এখন মেট্রোরেল চালু হয়েছে। অনেকে বাসের বদলে মেট্রোরেলে চড়ে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। সে জন্য সড়কেও গাড়ির চাপ কমেছে।
উল্লেখ্য, সপ্তাহের শুরুতে টানা দু’দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষ করে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) একদিন বিরতি দিয়ে আগামীকাল বুধ ও বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিএনপি, যা শেষ হবে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ৬টায়।