স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস-২০২৩ উপলক্ষে আজ বুধবার (৩০ আগস্ট ২০২৩) নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ দিদার-উল-আলম।
সকাল ১১টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সুপারনিউমারি অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক (বিইউপি) ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ দিদার-উল-আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন বিশাল মনের মানুষ। এ প্রজন্মের তরুণদের বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তিনি শোষিত, বঞ্চিত, মেহেনতি মানুষের পক্ষে কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। জাতির পিতার আদর্শে দেশ পরিচালিত হবে, শোকের মাসে এই হোক আমাদের প্রত্যয়। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল শহীদ সদস্য এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল শহীদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর একক প্রচেষ্টায় এই দেশটির জন্ম হয়েছে। স্বাধীনতার অর্থ হলো আত্মমর্যাদা। আজ আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি আমি বাংলাদেশের নাগরিক। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শীতা তার ব্যতিক্রমী একটি বৈশিষ্ট। ৭ মার্চের ১৮ মিনিটের ঐতিহাসিক ভাষণে দূরশর্দী বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি আরও বলেছেন ‘এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ’। এই ‘ইনশাল্লাহ’ শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ধর্মীয় চেতনা সম্পর্কে আমরা একটি পরিস্কার ধারণা পাই। ১৯৪৭ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতেন। ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের জন্মের মাধ্যমে আমরা তার প্রমাণ পাই।
ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বাঙালিরা তাকে মারবেনা। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে চিন্তা-চেতনায় তারা অবশ্যই পাকিস্তানি ছিল। এটি শুধু কিছু সংখ্যক বিপথগামী সৈনিকের কাজ ছিলনা। এর পেছনে কাজ করেছে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত। সরকারকে জাতির পিতা হত্যার পূর্ণাঙ্গ বিচার বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে। এ বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বরের জেল হত্যা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। সেই একই পরাজিত শক্তি মাননীয় প্রধানন্ত্রীকে ১৯ বার হত্যা চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশকে এসব ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নোবিপ্রবির মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী বলেন, নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। কার হাত ধরে আজকের এই বাংলাদেশ তা জানতে হবে। তবেই দেশকে ভালোবাসা সম্ভব। জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির নোবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, ‘গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পনেরো আগস্টের সকল শহীদদের। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে নানান ষড়যন্ত্র কাজ করেছে এবং এর সুবিধাভোগী হয়েছে পরবর্তী অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো। বর্তমানেও আমাদের যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা কি ভবিষ্যতের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো নাকি পাকিস্তানের মতো একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হবো সে সিদ্ধান্ত আজ আমাদের নিতে হবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিব্যদ্যুতি সরকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পপি বিশ্বাস। অনুষ্ঠানের সভাপতি সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তার সমাপনী বক্তব্যে জাতির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং অনুষ্ঠান আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।