আবু তাহের বাপ্পা : কোন প্রকার দ্বিধা বা সংকোচন নয় প্রকাশ্যে পছন্দের ঠিকাদার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মুখে খাওয়ার বড়ি কেনাকাটার টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়ার কারনে পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয় দরপত্র উন্মুক্ত কমিটির সভাপতি ও পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) জাকিয়া আক্তার।
সরকারের ওয়েব সাইট (সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল) এ দেখা যায় দেশের ৩৮ টি উপজেলায় জন্ম নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপাদান মুখে খাওয়ার বড়ি নেই। গণমাধ্যম সহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ নিয়ে একাধিক তথ্য বহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়। সারাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ চিকিৎসা পদ্ধতিতে সংকট দেখা দিলে সরকার জরুরী ভিত্তিতে ৫টি লটে ৪ কোটি ৮০ লাখ সাইকেল পিল কেনার উদ্যোগ নেয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২৭ ফেব্রুয়ারি ৭টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করেন। শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভাবে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করে।
স্বারক নং-৫৯.১১.০০০০.৩০২.০৭.৪০.২০২৩-(১১৮৮) তারিখ ২৮/২/২০২৪ ২৪ ২৪ এ প্যাকেজ নং-ঋঝউ/এউ-০৪ এর আওতায় জিত্তবি (উন্নয়ন) আরপিএ (জিওবি) খাতের অর্থায়নে ৫টি লটের মাধ্যমে ৪৫ মিলিয়ন সাইকেল মুখে খাওয়ার বড়ি (ঈঙঢ়) (৩য় প্রজন্ম ) সংগ্রহের লক্ষ্যে বেলা ২ ঘটিকার সময় অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত দরপত্র করন সভায় কার্যবিবরনীতে দেখা যায় যে টেন্ডার উন্মুক্ত করনের জন্য টেন্ডার উন্মুক্তকরণ কমিটির সভা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরণ সরবরাহ ও ইউনিটের কনফারেন্স রুমে (৬ষ্ঠ তলা) অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সভাপতি ও উপকরণ সরবরাহ ও সংগ্রহ পরিচালক জাকিয়া অখতার ছাড়াও উন্মুক্তকরণ কমিটির সকল সদস্যগণ এবং দরদাতা/দরদাতা প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিল। সকলের উপস্থিতিতে কমিটির সভাপতি দরপত্রে অংশ গ্রহণকারী সকলের দাখিলকৃত দর ও দাপ্তরিক প্রাস্থলিত মূল্য পাঠ করে।
উক্ত দরপত্রে দেশের শীর্ষস্থানীয় ৩টি জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ওরাল পিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।প্রতিষ্ঠানগুলো হলো টেকনো ড্রাগস লি: ৩১,সেগুনবাগিচা ঢাকা, রেনেটা লি:প্লট-১মিল্কভিটারোড, সেকশন -৭, মিরপুর, ঢাকা ও পপুলার ফার্মাসিউটি ক্যালস লি:শেলটেক, পান্থকুঞ্জ-১৭ শুক্রবাদ ঢাকা।তিদরদাতা প্রতিষ্ঠানেরদাখিলকৃত ও দাপ্তরিক প্রাকলিত মুল্য
নিম্ন রুপ:-
দরদাতা প্রতিষ্ঠানের নাম (১)রেনেটা লিঃ প্লট নং-১, মিল্ক ভিটা রোড সেকশন-৭, মিরপুর ঢাকা-১২১৬, বাংলাদেশ । ১,০০,০০,০০০,০০ প্রতি ইউনিট মূল্য ৪৯.৭৫ টাকা মোট ৪৪,৭৭,০০,০০০,০০ (চুয়াল্লিশ কোটি সাতাত্তর লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) ২১,০০,০০,০০০,০০ প্রতি ইউনিট মূল্য ৪৯.৭৫ টাকা , মোট ৪৪,৭৭,০০,০০০,০০(চুয়াল্লিশ কোটি সাতাত্তর লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) ৩১,০০,০০,০০০,০০ প্রতি ইউনিট মূল্য ৪৯.৭৫ মোট টাকা ৪৪,৭৭,০০,০০০,০০ (চুয়াল্লিশ কোটি সাতাত্তর লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) (২) টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ৩১, সেগুনবাগিচা ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।১১,০০,০০,০০০,০০ প্রতি ইউনিট মূল্য ৪৬.৮৫ মোট টাকা ৪২,১৬,৫০,০০০.০০ (বিয়াল্লিশ কোটি ষোল লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) ১,০০,০০,০০০,০০ প্রতি ইউনিট মূল্য ৪৬.৮৫ মোট টাকা ৪২,১৬,৫০,০০০.০০ (বিয়াল্লিশ কোটি ষোল লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ১,০০,০০,০০০,০০ প্রতি ইউনিট মূল্য ৪৬.৮৫ মোট টাকা ৪২,১৬,৫০,০০০.০০ (বিয়াল্লিশ কোটি ষোল লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) (৩) পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃশেলটেক, পান্থকুঞ্জ, ১৭, শুক্রাবাদ ঢাকা-১২০৭, বাংলাদেশ ১,০০,০০,০০০,০০ প্রতি ইউনিট মূল্য ৪৯.৭৫ মোট টাকা ৪৪,৭৭,০০,০০০,০০ (চুয়াল্লিশ কোটি সাতাত্তর লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ১,০০,০০,০০০,০০ প্রতি ইউনিট মূল্য ৪৯.৭৫ মোট টাকা ৪৪,৭৭,০০,০০০,০০ (চুয়াল্লিশ কোটি সাতাত্তর লক্ষ পঞ্চাশ হাজার)
কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও বিপত্তি ঘটে কাজ পাইয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে। একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে যে কমিটির সভাপতির পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়ার কারণে স্বারক নং-৫৯.১১.০০০০.৩০২.০৭.৪০.২০২৩-১৩১১ তারিখ ১৩/৩/২৪ ইং তারিখে জাকিয়া আখতার পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে দেন। উক্ত টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান দেশের সুনামধন্য ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেকনো ড্রাগস লি:।
টেন্ডার কমিটির সভাপতি জাকিয়া আখতার সদ্য প্েরদান্নতি প্রাপ্ত (উপকরণ ও সরবরাহ) পরিচালক। অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাদের ডিঙ্গিয়ে তাকে এই পদে পদোন্নতি দেয়ার পর দেশব্যাপী পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তা হতভম্ব হয়ে পড়েন। শুধু তাই নয় এ টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করার পর তার পুরনো দিনের কর্মকাণ্ড নিয়েও ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে?
ইতোপূর্বে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জাকিয়া আখতারের বিচার চেয়ে ব্যানার লাগানো হয়েছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তার উপ-পরিচালক লজিস্ট (ফরেন) নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। এরপর তিনি সংবাদের শিরোনাম হয়ে উঠেন। একাধিক সূত্র বলেছে পরিচালক হওয়ার পর তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করেছেন। বিভিন্ন সূত্র বলছে তার একজন নিকট আত্মীয় ক্ষমতাধর মšী¿ হওয়ার কারণে কোন কিছুকে তিনি তোয়াক্কাা করছেন না। অথচ তার নিকট আত্মীয় প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার। উক্ত মন্ত্রী তার নিজের দপ্তরকে ও দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট মুক্ত করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। কোন ব্যক্তির দায় তিনি নিবেন না।
ইতোমধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান টেকনো ড্রাগস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজালাল উদ্দিন আহমেদ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এর পরিচালক উপকরণ ও সরবরাহ বরাবর দরপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
ওই চিঠিতে বলা হয়, দর পত্রের সকল শর্ত মেনে আমরা দরপথে অংশগ্রহণ করি। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ প্রদান না করে দরপত্র বাতিল করায় আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
পাবলিক প্রকিউটরমেন্ট আইনের কোন ধারা অনুযায়ী দরপত্র বাতিল করা হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। ফলে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৬৫ (খ) এর উপবিধি (৯) এর (১১) অনুসারে আমাদের প্রতিষ্ঠান অভিযোগ দাখিল করেছে। যেহেতু দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে দরপত্র যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন করা হয়েছে সেহেতু এ ধরনের কার্মকান্ড নিয়ে দুর্নীতি বা চক্রাš মূলক কার্যকলাপের সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।
কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলো স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগের (পরিকল্পনা অধিশাখা) যুগ্ম সচিব সৈয়দা সালমা বেগম, ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ এর (টিসিবি) পরিচালক প্রশাসন ও অর্থ এস,এম শাহিন পারভেজ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো পরিচালক মাহমুদুল হাসান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লাইন ডাইরেক্টর (ফিড সার্ভিসের ডেলিভারি ইউনিট) বিপ্লব বড়ুয়া ও পরিচালক (এম সি এইচ সার্ভিস) ডা: মো: মনিরুজ্জামান সিদ্দিকী। তাদের সুপারিসেই দরপত্রের মুখে খাওয়ার বড়ি কেনাকাটার কথা বলা হয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর প্রতি ইউনিট মুখে খাওয়ার বরি ৫০.৫০ টাকার মধ্যে কেনার উদ্যোগ নেয়। সেক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা টেকনো ড্রাগস এর ৩টি লটের মূল্য যথাক্রমে (১) ১,০০,০০,০০০ মূল্যে ৪৬.৮৫ (২) ১,০০,০০,০০০ মূল্যে ৪৬৮৫ (৩) ১,০০,০০,০০০ মূল্যে৪৬.৮৫।
দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ঘিরে একটি শক্তিশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট কিছু দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তাদের সাথে যোগ সাজেসে শত শত কোটি টাকার কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
চলতি মেয়াদে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সমস্ত সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিবাজদের হটিয়ে সুশাসন ফিরিয়ে আনবেন এটাই জাতির প্রত্যাশা।
উল্লেখ্য যে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ে সচিব আজিজুর রহমান ইতোমধ্যে দুর্নীতিবাজ ও সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা রেখেছে। অধিদপ্তরের প্রায় ৬০লাখ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।