উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুবিধা কাজে লাগাতে তৈরি পোশাক শিল্পে অতিনির্ভরতা কাটিয়ে পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি অর্থনীতির সার্বিক সক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ।
শুক্রবার জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে।
জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের মতো মানদণ্ডগুলো অর্জন করেছে।
এ বিষয়ে কে এ এস মুরশিদ শনিবার বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে সবার আগে বাজার সুবিধার প্রশ্ন চলে আসে। বাইরে বাজার সুবিধা বাংলাদেশ টিকিয়ে রাখতে পারবে কি না। এক্ষেত্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি নিয়ে প্রধান উদ্বেগ দেখা দিলেও এর পরিধি আরও বাড়াতে হবে।
“আমি মনে করি না, আরএমজি (তৈরি পোশাক) আমাদের একমাত্র চালিকা শক্তি। আমাদের আরও অনেকগুলো খাত কিন্তু প্রমিজিং। সাময়িকভাবে বাজার নিয়ে সমস্যা হলেও তা কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের আছে। এর সঙ্গে যেসব নীতি সহায়তা প্রয়োজন, সেগুলো নিশ্চয় সরকার দেবে।”
এর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা একধাপ বাড়লো, যা বৈদেশিক বিনিয়োগ পাওয়ার পথকে আরও সুগম করবে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, বিভিন্ন পণ্যে আমদানি শুল্ক আরোপসহ আরও কিছু সুযোগ ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে হবে।
উত্তরণের ফলে বেশ কিছু সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে রহিত হয়ে যাবে; অন্যদিকে এর সুবিধাগুলো কাজের মাধ্যমে অর্জন করে নিতে হবে বলে অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন।
কে এ এস মুরশিদ বলেন, “আমার মনে হয় আমাদের প্রাইভেট সেক্টর খুব কনফিডেন্ট। তারা খুব বেশি যে বিচলিত আমার কাছে মনে হয় না। ওষুধ খাত বলেন, বস্ত্র খাত বলেন তারা অনেক শক্তিশালী জায়গায় চলে গেছে। এই যাত্রাটা অব্যাহত রাখতে হবে। এটা করতে পারলে তেমন ভয়ের কিছু নেই।
“উন্নয়নশীল দেশে সুফল পেতে হলে আমাদের যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার সেটা চালিয়ে যেতে হবে। দেশের মানুষের দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে। দক্ষতার বিষয়টি খুব বড় করে দেখতে হবে।”
কিন্তু বাংলাদেশ যাতে ‘মধ্য আয়ের ফাঁদে’ না পড়ে যায়, তার জন্য মানবসম্পদের উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উপর জোর দেন তিনি।
বিআইডিএস মহাপরিচালক বলেন, “সুশাসন ছাড়া হয়তো আমরা অনেকখানি এগিয়েছি। কিন্তু যদি আমরা ভাবি যে আমরা চিরকাল এভাবে চলতে পারব- সুশাসন ছাড়াই- এটা ভুল হবে।
তিনি বলেন, সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে যেসব নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিয়ে হতাশা আছে, সেগুলোকে ধরে ধরে নির্দিষ্ট সময় নিয়ে সংস্কার করতে হবে। আর এই কাজটা যদি জোর দিয়ে না হলে সামনে বিপদ আছে।