1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন

পদ্মা সেতুর নদীশাসনের ব্যয় বাড়ল ৮৭৭ কোটি

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

উদ্বোধন ও যানবাহন চলাচল শুরুর এক বছর পর পদ্মা বহুমুখী সেতুর নদীশাসনের ব্যয় ৮৭৭ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৩ টাকা বাড়ানো হলো। এতে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ পদ্মা সেতুর নদীশাসনের ব্যয় দাঁড়ালো ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। সেতু বিভাগরে প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যয় বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
আজ বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সেতু বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পদ্মা সেতুর নদীশাসনের ব্যয় বৃদ্ধির অনুমোদন দেয়।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, সেতু বিভাগ থেকে পদ্মা সেতুর নদীশাসনের ব্যয় ৮৭৭ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা এটির অনুমোদন দিয়েছে।
মন্ত্রিসভা কমিটিতে, এই ব্যয় বাড়ানোর পেছনে নদীশাসনে অতিরিক্ত সময় লাগা, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়াসহ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদীশাসন কাজ সম্পন্ন করতে মূল চুক্তিপত্রের সময়সীমার অতিরিক্ত ৫৫ মাস বেশি লাগে। বর্ষাকালে খরস্রোতা হলেও শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীতে অনেক চর জেগে ওঠে। নাব্য হ্রাস পাওয়ায় নদীতে ড্রেজার চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। বর্ষাকালে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে ড্রেজার চলাচল সহজ হয়। প্রাকৃতিক কারণে বছরের বেশ কয়েক মাস ড্রেজার চলাচল করতে না পারায় নদীশাসনের কাজ ব্যাহত হয়। এ কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া কোভিড-১৯ চলাকালীন বিদেশ থেকে ঠিকাদারের জনবল নিয়োগসহ পাথর ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী এবং যন্ত্রপাতি আমদানি সীমিত হয়ে পড়ে। এসব নানাবিধ কারণে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নদীশাসনে নতুন করে যে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে, তার মধ্যে ঠিকাদারের কাজের অতিরিক্ত সময় বাড়ানোর কারণে ২৬০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে কাজ সম্পাদনের সময় ডিজাইন পরিবর্তনজনিত কারণে ও গাইড বাঁধের ৫০ মিটার পর্যন্ত বৃক্ষরোপণে ৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। নৌযান চলাচলের সুবিধার্থে নদীর নাব্য বৃদ্ধির জন্য ড্রেজিং কাজের ব্যয় বেড়েছে ৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
মাওয়া প্রান্তে ভরাট, বাউন্ডারি ফেন্সিং, নতুন ল্যাব ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ, অতিরিক্ত রাস্তা নির্মাণসহ ফেরিঘাট স্থানান্তর, সফটওয়্যার ও সরঞ্জামসহ নতুন সার্ভে ভেসেল কেনা, উভয় প্রান্তে লোডিং এবং আনলোডিং ইয়ার্ডসহ ওজন সিস্টেম ক্রয়, অপটিক্যাল ফাইবার ইনস্টলেশন, অতিরিক্ত ৩ নম্বর টোল বুথ স্থানসহ কয়েকটি খাতে ৩৫৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
নদীশাসন কাজের চুক্তি সই হয় ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর এবং কাজ শেষ হয় চলতি বছরের ৬ আগস্ট। এ সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে ৬৩৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
আবার চুক্তির সময়ে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৮ টাকা ২৫ পয়সা। মার্কিন ডলার বিনিময় হার বাড়ার কারণে ঠিকাদারকে বাড়তি বিনিময় হারে ডলার কিনতে হয়েছে। এ জন্য ব্যয় বেড়েছে ২৬৪ কোটি ২১ লাখ টাকা।

সরকারের ভ্যাট ও আয়কর হার বাড়ানোর কারণেও পদ্মা সেতুর নদীশাসনের ব্যয় বেড়েছে। সরকার বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট ও আয়করের হার সাড়ে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এ জন্য ব্যয় বেড়েছে ২৭২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এসব ক্ষেত্রে মোট ব্যয় বেড়েছে এক হাজার ৮৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে নদীশাসনের আওতায় থাকা চারটি খাতে ৯৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা খরচ কম হয়েছে। এতে নদীশাসনের প্রকৃত ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৮৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনের অনুমোদিত মোট চুক্তি মূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৫৮৬ কোটি ২২ লাখ ৮ হাজার ৯ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রায় ৭৮ কোটি ২৩ লাখ ১২ হাজার ২৪৮ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে।
এখন সংশোধিত চুক্তিমূল্য বেড়ে ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা হলো। এর মধ্যে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৫০ কোটি ৪১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭৭ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এতে ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫৯ মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। নদীশাসন কাজের জন্য ঠিকাদারকে আইপিসি-৯৬ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রায় ৫৭ কোটি এক লাখ ৩১ হাজার ৩০৬ মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে এবং ১৩ কোটি ৭১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮২ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে।
সেতু বিভাগ জানিয়েছে, পদ্মা নদী খরস্রোতা হওয়ায় সম্ভাব্য নদীভাঙনের হাত থেকে অ্যাপ্রোচ সড়কসহ সেতু নির্মাণের পাশাপাশি মাওয়া ও জাজিরার উভয় তীরে নদীশাসনের কাজ একই সঙ্গে হাতে নেওয়া হয়। মাওয়া প্রান্তে ১ দশমিক ৮৩৫ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১১ দশমিক শূন্য ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীশাসনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাউনসেল এইসিওএম’ থেকে মূল সেতু, নদীশাসন ও অ্যাপ্রোচ সড়ক কাজের বিস্তারিত ডিজাইন করা হয়েছে। এফআইডিআইসি কন্ট্রাক্ট ডকিউমেন্ট অনুযায়ী, পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদীশাসন কাজের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত দরপত্র গ্রহণ করা হয় ২০১৪ সালের ১৯ জুন। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদীশাসন কাজের জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশনের নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়।

এই প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর সিনোহাইড্রো করপোরেশনের সঙ্গে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ৪৮ মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে চুক্তিপত্র সই হয়। যার চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকা। এই কাজ তদারকির জন্য কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট হিসেবে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নিয়োজিত।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি