মহান রাব্বুল আলামীন মহা কৌশুলী ও শ্রেষ্ঠতম মহা বিজ্ঞানী। সৃষ্টিজগতের সর্বত্রই তার পরম ও চরম কৌশল ও প্রজ্ঞাশীলতার চাপ পরিলক্ষিত হয়।
মাহে রজমানও এর ব্যতিক্রম নয়। এতদপ্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘রমজান ধৈর্য, আত্মসংযম ও তিতিক্ষার মাস। আর ধৈর্যের প্রতিফল আল্লাহর নিকট হতে জান্নাত লাভ করা যাবে। আর ইহা পরস্পর সহদয়তা, সোহার্দ্য ও সৌজন্য প্রদর্শনের মাস। এই পবিত্র বাণীর মর্ম ও তাৎপর্য খুবই ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী। কেননা, দীর্ঘ এক মাস যথাযথভাবে রোজা পালন করা- খুবই কষ্টকর ব্যাপার। ধৈর্য সবর আত্মসংযম, সহনশীলতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষার সহযোগিতা রোজা পালনের জন্য একান্ত আপরিহার্য। ধৈর্য ও সবর না হলে দিনভর রোজা পালন কিছুতেই সম্ভব নয়। একই সাথে লোভ ও লালসা সংবরন করতে না পারলে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার, কামাচার ও পাপাচার হতে নিজেকে সংযত ও বিমুক্ত রাখা অসম্ভব। ধৈর্য-ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংযম না থাকলে ক্ষুধা পিপাসার জ্বালা-যন্ত্রণা এবং রিপুর তাড়না কেউই সহ্য করতে পারে না।
তাছাড়া একটানা এক মাসের দীর্ঘ সময়ের রোজা পালন সিয়াম সাধনাকারীদের ধৈর্য ধারণে অভ্যস্ত করে তোলে এবং সহনশীলতার গুণে উজ্জীবিত ও সমৃদ্ধ করে উচ্চতর পবিত্র জীবনের অঙ্গনে পরিভ্রমণ করতে শেখায়। এই ধুলার ধরনীতে ক্ষুধা ও পিপাসা মানুষকে কতখানি দুঃসহ কষ্ট ও যন্ত্রণার সম্মুখীন করে তা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। রোজা রাখার মাধ্যমে সমাজের সাধারণ লোকদের যে কি কষ্টের ভেতর দিয়ে দিন গুজরান করতে হয়, সে বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পাওয়া যায়। যার দরুণ দরিদ্র ও ক্ষুধা কাতর মানুষদের প্রতি অকৃত্রিম সাহায্য, সহানুভ‚তি ও সহৃদয়তা জাগ্রত হওয়া সিয়াম সাধনার প্রত্যক্ষ শুভফল। তাই, এ কথা সহজেই বলা যায় যে, রোজা প্রকৃতই রোজাদারকে সমাজিক কল্যাণের প্রতি অনুরাগী করে তোলে এবং সুষ্ঠু ও পরিমার্জিত সমাজ গঠনে উদ্ভুদ্ধ করে। মরমী কবি যথার্থই বলেছেন যে, ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাহি কেউ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা-পরের তরে।’ এই অনুভব ও অনুভূতিকে জাগ্রত করে সিয়াম সাধনা।
এর জোয়ার ধারা শুধুমাত্র একটি অঞ্চল বা একটি এলাকাকেই কল্যাণ ও মঙ্গলের স্রোতধারায় সঞ্জীবিত করে তোলে না, বরং বিশ্বময় এক অখন্ড কল্যাণ ও মঙ্গলের অমিয় প্রবাহ জাগিয়ে তোলে, যার ফলশ্রতিতে পৃথিবীর সর্বত্র নেমে আসে সুখ-শান্তি, পবিত্রতা ও নির্মলতার মধুময় প্রশান্তি। মহান আল্লাহপাক আমাদের সেই শান্তির সরোবরে অবগাহন করার তৌফিক এনায়েত করুন- এটাই আজকের একান্ত প্রত্যাশা।