করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে বইমেলা বন্ধ করা হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। তবে তার আগে বইমেলায় করোনা বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নেওয়া হবে বলে জানালো বইমেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ বাংলা একাডেমি।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) দুপুরে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলা ২০২১ নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য সচেতনতায়। মাস্ক ছাড়া বইমেলায় একদমই প্রবেশ করা যাবে না। প্রতিটি প্রবেশপথে এ বিষয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। মাস্ক থাকলে তবেই একজন মেলায় প্রথম স্তরে ঢোকার অনুমতি পাবেন। এরপর তার শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে এবং তা ঠিক থাকলে স্যানিটাইজ করা হবে। সবশেষে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করে মূল মেলায় ঢুকতে পারবেন লেখক-পাঠক-দর্শনার্থীরা।
এছাড়া মেলায় ঢুকে পড়ার পর কেউ যেন মাস্ক না খুলে ফেলেন, সে বিষয়টিও নজরদারিতে রাখবে প্রশাসন ও একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিট; মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মেলায় ৩৩টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি পাঁচটি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেওয়া হয়েছে। একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই ও বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন, শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য একটি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর একটি স্টল থাকবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এবার বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বইমেলা ১৮ মার্চ শুরু হয়ে চলবে ১৪ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২১ উৎসর্গিত হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। এবারের বইমেলার মূল থিম ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’। ১৮ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বঙ্গবন্ধু রচিত ও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এর ইংরেজি অনুবাদের আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা। শেখ হাসিনা এই গ্রন্থ উন্মোচন করবেন। এছাড়া উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২০ দেওয়া হবে।
মেলায় প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্বপ্রান্তে এবার নতুন একটি প্রবেশপথ করা হয়েছে। রমনাপ্রান্তে একটি প্রবেশ পথ ও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবমিলে সোহরাওয়ার্দীতে তিনটি প্রবেশপথ ও তিনটি বাহিরপথ থাকবে। প্রত্যেক প্রবেশপথে সুরক্ষিত ছাউনি থাকবে, যাতে বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যে মানুষ আশ্রয় নিতে পারেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবার নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
বইমেলা ১৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এবারের বইমেলা। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এবারের মেলায় ঝড়ের আশংকা থাকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। বৃষ্টি ও ঝড়ের আশংকা বিবেচনায় রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারটি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এবার বৃষ্টির পানি মেলা প্রাঙ্গণ থেকে দ্রুত নিষ্কাশণের ব্যবস্থা থাকবে। লেখক বলছি মঞ্চ ও গ্রন্থ উন্মোচনের স্থান বিশেষভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। নামাজের ঘর, টয়লেট ব্যবস্থা সম্প্রসারিত ও উন্নত করা হয়েছে। নারীদের জন্য সম্প্রসারিত নামাজ ঘর থাকবে। পুলিশের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কাছে একটি ব্রেস্টফিডিং কর্নার থাকবে। প্রতি বছরের মতো এবারও হুইলচেয়ার সেবা থাকবে। তবে গতবারের চেয়ে বেশি সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবী এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে থাকবে দু’টি ফুডকোর্ট।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, আপনার জানেন দেশে সম্প্রতি করোনা বেড়ে গেছে। বিগত কয়েকদিন ১০০ থেকে ২০০ জন করোনা আক্রান্ত হচ্ছিল, এখন সেটা দুই হাজারের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে অমর একুশে বইমেলা শুরু হচ্ছে। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। মেলা চলাকালে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবনতি হলে আমরা কঠিন সিদ্ধান্তে যাবো। কারণ আগে তো জীবন।
১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে আয়োজন হচ্ছে। রমনার বটমূলের অনুষ্ঠানে সীমিত পরিসরে হবে। ফলে, সেদিন বইমেলায় জনসমাগম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই দিনটিতে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনাও হাতে নিতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা সবাই সচেতন হলেই একটা সুন্দর বইমেলা করা সম্ভব।