1. admin@jatioarthonitee.com : admin :
  2. arthonite@gmail.com : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

পর্দাই হোক নারীর আসল পরিচয়

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

মোহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম:নারীর সামাজিক অবস্থান ও তার জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো ‘পর্দা’ বা ইসলামি বিধান অনুসারে নারীর পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চলাফেরার সীমাবদ্ধতা। আমাদের সমাজে নারীর স্বাধীনতা, আধুনিকতা এবং সমানাধিকারের কথা অনেক সময় উচ্চারিত হয়, কিন্তু এসব বিষয় যখন ইসলামি চিত্রে দেখা যায়, তখন অনেকে বিস্মিত হন। ইসলাম নারীর জন্য পর্দার বিধান রেখেছে, যা কুরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পর্দা নারীকে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পারিবারিক ক্ষেত্রে তার আসল পরিচয় ও মর্যাদা রক্ষা করতে সাহায্য করে। পর্দার বিধানটি ইসলামের একটি অকাট্য বিধান। কুরআন মজীদের অনেকগুলো আয়াতে এই বিধান দেয়া হয়েছে। সুতরাং কোনো ইমানদারের পক্ষে এই বিধানকে হালকা মনে করার সুযোগ নেই। এখানে কয়েকটি আয়াত সংক্ষিপ্ত আলোচনাসহ তুলে ধরা হল।

“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব : ৫৯)
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমণ্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে।(ফাতহুল বারি ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
“আর ইমানদার নারীদেরকে বলে দাও তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, আর তাদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করতে যা এমনিতেই প্রকাশিত হয় তা ব্যতীত। তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, নিজেদের মহিলাগণ, স্বীয় মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনামুক্ত পুরুষ আর নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্যের কাছে নিজেদের শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন শোভা সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা নূর : ৩১)
এই আয়াতটি নারীকে নির্দিষ্ট একটি অন্তর্বাস বা স্কার্ফ ব্যবহার করে তার সৌন্দর্য আড়াল করতে নির্দেশনা দিয়েছে। এর মাধ্যমে নারী তার সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে সক্ষম হন, এবং তার বাহ্যিক সৌন্দর্য কেবল তার স্বামী বা মাহরামদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকে। সমাজে নারীর পুরুষদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা কোনোভাবেই কাম্য নয়, কারণ এটি যৌন উত্তেজনা ও অশ্লীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
হাদিসে, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন,
“যে নারী পর্দা না করে বের হয়, সে পরপুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তাকে গোনাহের মধ্যে ফেলা হয়।” (সুনানে আবু দাউদ)
এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, পর্দা নারীর শালীনতার এবং সতীত্বের প্রতীক। পর্দা নারীকে তার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করার জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। যদি নারীরা পর্দা পালন না করেন, তবে তারা পুরুষের দৃষ্টিতে শুধু শারীরিক আকর্ষণ হয়ে ওঠেন, যা তাদের আত্মসম্মান ও শালীনতাকে ক্ষুণ্ন করে।
তবে, পর্দার বিধান শুধু নারীই পালন করবেন, এমন নয়। পুরুষদেরও তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনের অন্য আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে,
“মুমিন পুরুষদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে রক্ষা করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্র। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন, যা তারা করে।” (সূরা নূর : ৩০)
এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, পুরুষদেরও নারী-পুরুষের মধ্যকার দৃষ্টি সঞ্চালনের প্রতি সংযম থাকতে হবে, যেন কোনো অশালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
পর্দার মূল উদ্দেশ্য হলো, নারীর শালীনতা ও সম্মান রক্ষা করা এবং সমাজে পবিত্রতা ও সৌজন্যতা বজায় রাখা। ইসলাম নারীর স্বাধীনতা ও অধিকারকে সম্মান জানায়, কিন্তু সে স্বাধীনতা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকতে হবে, যা পর্দার মাধ্যমে অর্জন করা যায়।
তবে পর্দার এই বিধান কোনোভাবেই নারীর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়। বরং এটি নারীর মর্যাদা, তার চরিত্রের পরিস্কারতা এবং তার আত্মসম্মান রক্ষা করার এক মৌলিক উপায়। যেখানে একজন নারী পর্দার মাধ্যমে তার আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারেন। ইসলাম নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সম্মানজনক আচরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
অতএব, পর্দা নারীর আসল পরিচয়। এটি তার শালীনতা, মর্যাদা এবং সমাজে তার স্থিতিশীলতার প্রতীক। ইসলামি বিধান অনুসারে, পর্দার মাধ্যমে নারী তার জীবনে পূর্ণ সম্মান এবং নিরাপত্তা অর্জন করতে পারেন। আমাদের সমাজে এই বিধানটি সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে, নারীর ভূমিকা আরও দৃঢ় ও সুরক্ষিত হবে।
এটি শুধু নারীরই নয়, সমাজেরও কল্যাণ নিশ্চিত করবে, কারণ একটি শালীন এবং মর্যাদাপূর্ণ সমাজই সর্বস্তরে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা আনতে পারে।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ,বাংলা
শিক্ষার্থী,চট্টগ্রাম কলেজ

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি