নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সারাদেশে আরও হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় দেশের প্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম স্থাপন করা হয়েছে। এ প্রজেক্ট সফল হলে সারাদেশে আরও নির্মাণ করা হবে।
রোববার চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বাংলাদেশের প্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যামের ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিএডিসির চেয়ারম্যান সায়েদুর ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও সংযুক্ত ছিলেন কৃষি সচিব নাসবরুজ্জামান। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএডিসির সদস্য পরিচালক, প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালকসহ বিএডিসির অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পানি ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বাংলাদেশে প্রথম ভরাশঙ্খ হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। এটা পাইলট হিসেবে কাজ করবে। ড্যাম নির্মাণ আধুনিক প্রযুক্তি নেওয়া হয়েছে। এ প্রজেক্ট সফল হলে বিএডিসি সারাদেশে এ ধরনের আধুনিক ড্যাম আরও স্থাপন করবে। এখন দেশে বর্তমানে ৬৭টি রাবার ড্যাম রয়েছে। তাই আমরা আরও উন্নত মানের এ ধরনের ড্যাম করবো। ”
তিনি বলেন, কৃষি কাজে ধান উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ হতো সেচের পানির জন্য। এখন শ্রমিক পাওয়া যায় না কৃষি কাজ করার জন্য। শ্রমিক একটা বড় সমস্যা। শ্রমিকের খরচ দিলে কৃষকের লাভ হয় না। এজন্য আমরা একটা কর্মসূচি নিয়েছি। ধান কাটতে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন যেটা দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই করা যাবে। এ মেশিনের দাম যদি হয় ৩০ লাখ টাকা ১৫ লাখ টাকা দেবে সরকার। আর উপকূলীয় এলাকায় এ মেশিন দেওয়া হবে সেখানে ৭০ শতাংশ টাকা দেবে সরকার। যেখানে ২৮ লাখ টাকা দাম হলে ২১ লাখ টাকা সরকার দেবে। আর কৃষককে দিতে হবে সাত লাখ টাকা। আনোয়ারাতে যতটা হারভেস্ট মেশিন লাগবে ততটা দিতে পারবো। সেক্ষেত্রে কৃষকদের মাত্র ৩০ শতাংশ দাম দিতে হবে বাকিটা সরকার দেবে। এখানে নেত্রীর একটাই উদ্দেশ্য গ্রামীণ মানুষের উন্নয়ন করা যাতে একটি মানুষও না খেয়ে থাকে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ খুবই সীমিত সম্পদের দেশ। চিরদিনই খাদ্যের ঘাটতির দেশে ছিল। আমরা দেখেছি আশ্বিন-কার্তিক মাসে কোনো মানুষের ঘরে খাবার থাকতো না। বর্তমানে দেশে আর কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোনো কোনো বছর আমরা খাদ্যপণ্য রপ্তানিসহ বিদেশে সহায়তাও হিসেবে দিতে পারি। কৃষিকে আরও এগিয়ে নিতে সরকার বদ্ধপরিকর।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির কারণে জাতিসংঘসহ অনেক দেশ মনে করেছিল সারা বিশ্বে খাদ্য ঘাটতিসহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলাতে হবে। এক ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। করোনা মহামারিতে খাদ্যে সংকট দেখা দিলে আমাদের জাতি হিসেবে টিকে থাকা কঠিন হবে। এর ফলে গত সাত আট মাসে দেশে খাদ্যের কোনো সংকট হয়নি। করোনার মধ্যে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম বলে আমরা বেঁচে গেছি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন ৯০ টাকা কেজি ছিল ডিএপি সার, টিএনপি ছিল ৮০/৮২ টাকা, পটাশিয়াম ছিল ৭০ টাকা। সেই ৭০ টাকার পটাশিয়াম আজকে ১৫ টাকায় দিচ্ছে। নেত্রী ৬০ টাকার টা ৫০ টাকা করেনি ১৫ টাকা করেছে। ডিএপি সারের দাম ছিল ৯০ টাকা যা করেছি ১৬ টাকা। প্রথমে ২৫ টাকা পড়ে ১৬ টাকায় নামিয়ে এনেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ কৃষকদের এত সাবসিডি দেয় কি না আমার জানা নেই। অথচ বিএনপি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কৃষকরা সারের জন্য বিক্ষোভ করেছেন, সে আন্দোলন থামানোর জন্য ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আবার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেও বিদ্যুতের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০/২২ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। কাজেই কৃষির জন্য পানি সার গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের জমি বাড়ছে পানি কমে যাচ্ছে। আগে জনগণ ছিল সাড়ে সাত কোটি সেটা বেড়ে ১৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এদেরকে তো খাদ্য দিতে হবে। এজন্য খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে আমাদের যে পানি নেমে যায় সেজন্য উপর থেকে নেমে আসা পানি ধরে রেখে কীভাবে ব্যবহার করতে পারি। তাই এ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ব্যবহার যোগ্য পানি দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই ধারণা পানির অভাবে পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে ইতোপূর্বে নির্মিত রাবার ড্যামসমূহ সাধারণত সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আধুনিক প্রযুক্তির এ হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম দ্বারা উজান থেকে আগত মিঠা পানি সংরক্ষণ ও ভাটিতে সাগর থেকে আগত লোনাপানির অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে। নির্মিত ড্যামটি ৩৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ মিটার উচ্চতার এ ড্যামে পাঁচটি হাইড্রোলিক জ্যাক সংযুক্ত প্যানেল করা হয়েছে। চীনের সর্বাধুনিক এ প্রযুক্তি দিয়ে এ এলাকার তিন হাজার হেক্টর জমিতে, সেচ সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে। যেখানে উৎপাদিত খাদ্য শস্যের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন এবং এর বাজার মূল্য প্রায় ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা।