ভাদ্র ও আশ্বিন মিলে শরৎকাল। শরতের শেষে রোদের তেজে কৃষকের মাঠে চাষের ব্যস্ততা।কিন্তু কৃষকের মুখে হাসি নেই। আছে শুধু হতাশা।
যেখানে প্রতিদিন বৃষ্টি পড়ার কথা, মাঠ সেখানে পানি শূন্য। বৃষ্টি না থাকা এবং মাঠে পানি শূন্যতায় কৃষকের মুখে এখন হতাশার ছাপ। অনেক কৃষকের মতে ‘এ যেন মরুভূমি’।
বাংলা দিনপঞ্জির হিসাবে শ্রাবণ বিদায় নিয়ে ভাদ্রের মাঝামাঝি। কিন্তু এই ভরা বর্ষাতেও স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ও মৎস্যের ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বরগুনা জেলায়। এতে কৃষকেরা আমন ধান চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পানির অভাবে অনেক কৃষকের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি আর বৃষ্টির পানি পাওয়ার কারণে বিকল্প সেচ ব্যবস্থা না থাকায় এখন বিপাকে তারা।
উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটার কাকচিড়া, কালমেঘা, নাচনাপাড়া, সদর পাথরঘাটাসহ বেশকটি ইউনিয়নের মাঠজুড়ে পানি শূন্য রয়েছে। প্রান্তিক চাষিরা এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
কৃষকদের মতে জোয়ার-ভাটার দক্ষিণাঞ্চল এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
কথা হয় নাচনাপাড়া ইউনিয়নের সিংড়াবুনিয়া গ্রামের ৭০ বছরের আ. মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন কোলায় (মাঠ) কোনো পানি নাই, বৃষ্টিও নাই। কেমনে যে বীজ রুমু…আল্লায় জানে। এহন মনে হয় যেন মরুভূমি’।
তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে ধান আর অইবে না। গত বছর ২ একর জমিতে যে ধান পাইছি এবার মনে হয় অর্ধেকও ওটবেনা’।
বাদুরতলা গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, পানি না থাকায় ৬৬ শতক জমি চাষযোগ্য করে তুলতে এখনো পারিনি। ধানের চারায় এখন পচন ধরেছে।
রুহিতা গ্রামের সৌরভ মিয়া বলেন, ধানের বীজ এখন পুড়ে যাচ্ছে। ক্ষেতে বৃষ্টি বা পানি না থাকায় এখন রোপণ করতে পারছি না।
পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল বলেন, অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বৃষ্টির মৌসুমে না থাকা আর শুকনো মৌসুমে বৃষ্টি হওয়া এটা তো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। আমি মনে করি ভাদ্র মাসে এসেও যেখানে বৃষ্টি থাকার কথা সেখানে খড়া এটাও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর অতি বৃষ্টির কারণে কিন্তু পাথরঘাটার অনেক বীজতলা নষ্ট হয়েছে যার ফলে ফলনও অনেক কম হয়েছে। এ বছর আমন চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯শ হেক্টর।