সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু চার জনপ্রিয় সঞ্চয়পত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা যায় পেনশনার সঞ্চয়পত্রে। এ সঞ্চয়পত্র থেকে মুনাফাও পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। তবে শুধু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরাই এতে বিনিয়োগ করতে পারেন।
এমনকি ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে অর্জিত মুনাফার ওপর কোনো উৎসে করও কাটা হয় না। আবার পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে মুনাফার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়ামও (এসএসপি) দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের।
অবসরভোগী সরকারি কর্মচারীদের জন্য আকর্ষণীয় এ সঞ্চয়পত্র ২০০৪ সালে চালু করেছিল জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র—এগুলোতে বিনিয়োগ করা যায় একক নামে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অথবা যৌথ নামে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। কিন্তু পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যায় সব ধরনের সঞ্চয়পত্র মিলিয়ে যৌথ নামে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। পেনশনার ছাড়া অন্য সঞ্চয়পত্রগুলোতে মুনাফার হার রয়েছে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ পর্যন্ত।
অবসরভোগী সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। কেনার সময় দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি থাকতে হয়। এ ছাড়া দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি দিতে হয় নমিনি বা নমিনিদের।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়, তার ৭ শতাংশই হচ্ছে পেনশনার সঞ্চয়পত্র। মুনাফার হার ৫ বছর মেয়াদে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎসে কর কাটা না হলেও ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার ওপর উৎসে কর আছে ১০ শতাংশ।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র আছে ৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা, ৫ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের। এগুলো কেনা যায় জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে। যে জায়গা থেকে কেনা হয়, সে জায়গা থেকেই ভাঙাতে হয়।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র পাঁচ বছর মেয়াদি। মেয়াদ শেষে মুনাফা ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে বছরভিত্তিক মুনাফার হার ভিন্ন। মুনাফার হার ১ম বছর শেষে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২য় বছর শেষে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৩য় বছর শেষে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ৪র্থ বছর শেষে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ৫ম বছর শেষে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এক বছরের আগে ভাঙানো হলে কোনো মুনাফা দেওয়া হয় না।
তবে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতেও পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে মুনাফা তোলা যায়। যেমন ৫০ হাজার টাকা মূল্যমানের মুনাফা ১ হাজার ৪৭০ টাকা। একইভাবে ১ লাখ টাকায় ২ হাজার ৯৪০ টাকা, ২ লাখ টাকায় ৫ হাজার ৮৮০ টাকা, ৫ লাখ টাকায় ১৪ হাজার ৭০০ টাকা এবং ১০ লাখ টাকায় ২৯ হাজার ৪০০ টাকা। ত্রৈমাসিক মুনাফা উত্তোলনের পর ৫ বছর মেয়াদ শেষে মূল বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া যায়। মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করলে ত্রৈমাসিক মুনাফা কর্তনের পর বাকি অর্থ ফেরত দেওয়া হয়।
এ সঞ্চয়পত্র যেখান থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, সেখানে ভবিষ্য তহবিলের মঞ্জুরিপত্র এবং প্রাপ্ত আনুতোষিকের মঞ্জুরিপত্র অথবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের একটি সনদ দাখিল করতে হয়। এ সঞ্চয়পত্র ব্যাংকঋণের জন্য জামানত বা আমানত হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। ব্যবসা-বাণিজ্যেও এ সঞ্চয়পত্র জামানত হিসেবে ব্যবহার করা যায় না।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার পেনশনার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে সরকারকে এ সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে মুনাফা দিতে হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম জানান, বিনিয়োগের আকর্ষণীয় ক্ষেত্র পেনশনার সঞ্চয়পত্র। সাধারণত মোট বিক্রির ৭ থেকে ৮ শতাংশ প্রতিবছরই এ সঞ্চয়পত্র থেকে আসে। আগের অর্থবছরে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ হলেও বিদায়ী অর্থবছরে তা কমে ৭ শতাংশ হয়েছে। যেহেতু অবসরভোগীরাই এ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন, তাই হুট করে এতে বেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।