২০২৪ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা আগেই নিশ্চিত করেছিল ২০১৮’র বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। তাই জিব্রাল্টার মতো পুঁচকে দলটি যে তাদের কাছে পাত্তা পাবে না, তা আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। তাই বলে ব্যবধানটা এমন হবে কল্পনা করা যায় না। যে দলে কিলিয়ান এমবাপ্পে, অঁতোয়ান গ্রিজম্যান, অলিভিয়ের জিরুড, ওসমান দেম্বেলের মতো বিশ্বের সেরা তারকারা আছে তাদের সঙ্গে এমন হবে এটাই স্বাভাবিক। গত রাতে ইউরো বাছাই পর্বের ম্যাচে জিব্রাল্টাকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) ঘরের মাঠ অ্যালিয়েঞ্জ রিভেইরায় ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বের খেলায় জিব্রাল্টারকে ১৪ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে শক্তিশালী ফ্রান্স। ম্যাচে প্রথমার্ধেই ৭-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ইউরোর বাছাই পর্বে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়ের রেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটি ছিল ৪ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিল জার্মানির দখলে। ২০০৮ সালের ইউরোর বাছাইয়ে সান ম্যারিনোর জালে ১৩ গোল দিয়েছিল জার্মানি।
লেস ব্লুসদের হয়ে ম্যাচে হ্যাটট্রিক তুলে নিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, করেছেন জোড়া অ্যাসিস্টও। জোড়া গোল করেছেন অলিভিয়ের জিরুড ও কিংসলে কোম্যান। একটি করে গোল করেছেন মার্কাস থুরাম, ওয়ারেন জাইরে-এমেরি, জোনাথান ক্লস, ইউসুফ ফোফানা, আদ্রিয়ান র্যাবিওট ও ওসমান দেম্বেলে। বাকি গোলটি ইথান স্যান্তোসের আত্মঘাতী।
র্যাঙ্কিংয়ের হিসেবে ফ্রান্স ও জিব্রাল্টারের মধ্যে দূরত্ব ১৯৯। ফ্রান্সের অবস্থা টেবিলের দুইয়ে আর জিব্রাল্টারের অবস্থান ২০১ নম্বরে। ইউরো বাছাইয়ের গ্রুপ বি-তে থাকা দলটি বাছাই পর্বে খেলা ৭ ম্যাচের সবকটিতেই হারের স্বাদ পেয়েছে। এই সাত ম্যাচে তাদের হজম করতে হয়েছে ৩৫ গোল, বিপরীতে প্রতিপক্ষের জালে একটি গোলও দিতে পারেনি। অন্যদিকে ফ্রান্স শতভাগ জয়ে সবার আগে ইউরো ২০২৪ এ স্থান নিশ্চিত করেছে। এই সাত ম্যাচে ২৭ গোলের বিপরীতে হজম করেছে মাত্র ১ গোল।
এদিন ঘরের মাঠে ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই স্যান্তোসের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। পরের মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন থুরাম। ১৬তম মিনিটে কিংসলে কোম্যানের পাস থেকে দলের লিড আরও বাড়ান জাইরে-এমেরি। এদিন ১৭ বছর বয়সে ফ্রান্সের হয়ে অভিষেক হয় এই তারকা। অভিষেক ম্যাচেই গোল করে ফ্রান্সের পক্ষে কনিষ্ঠতম গোলদাতায় পরিণত হন। তবে কিছুক্ষণ পর জিব্রাল্টারের এক খেলোয়াড়ের কড়া ট্যাকলে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন পিএসজির এই মিডফিল্ডার। ম্যাচের ১৭তম মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় জিব্রাল্টা। ভিএআরের মাধ্যমে তাকে রেফারি সরাসরি লাল কার্ড দেখান।
ম্যাচের ৩০তম মিনিটে নিজের প্রথম গোলটি করেন এমবাপ্পে। ভিএআরের মাধ্যমে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে গোল করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড। ৪ মিনিট পর এমবাপ্পের পাস থেকে গোল করে দলের লিড ৫-০ করেন জোনাথান ক্লস। ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে দলের লিড ৬ এ উন্নীত করেন কিংসলে কোম্যান। এক মিনিট পর এমবাপ্পের অ্যাসিস্ট থেকে দলের লিড ৭-০ করেন ইউসুফ ফোফানা।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে ২০১৮’র বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তবে বেশ কিছুক্ষণ ফ্রান্সকে আটকে রাখতে সক্ষম হয় জিব্রাল্টার খেলোয়াড়রা। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম গোলটি আসে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে আদ্রিয়ান র্যাবিওটের হাত ধরে। তার দুই মিনিট পর ৬৫ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন কিংসলে কোমান। ৭৩তম মিনিটে জোনাথন ক্লসের পাস থেকে দলের লিড ১০-০ করেন ওসমান দেম্বেলে।
ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে থিও হার্নান্দেজের অ্যাসিস্ট থেকে দলের ১১তম ও ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন এমবাপ্পে। ৮০তম মিনিটে আরও একটি গোল হলেও তা ভিএআরের কল্যাণে বাদ হয়ে যায়। তবে ৮২তম মিনিটে ইউসুফ ফোফানার পাস থেকে গোল করে ১২-০ তে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন এমবাপ্পে। সেই সঙ্গে ম্যাচে হ্যাটট্রিক তুলে নেন পিএসজি তারকা।
ফ্রান্সের সবাই যখন গোল উৎসব করছে তাহলে চুপ থাকবেন কেন দলটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা অলিভিয়ের জিরুড। বিষয়টি মনে হয় সাইড বেঞ্চে বসে ভালো লাগেনি তার। তাই তো বদলি হিসেবে নেমে ৮৯ ও ৯১ মিনিটে শেষ গোল দুটি করেন এসি মিলানের এই ফরোয়ার্ড। তবে ম্যাচে সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল এদিন ফ্রান্সের পক্ষে কনিষ্ঠতম গোলদাতা ও বয়ঃজেষ্ঠ গোলদাতার মধ্যে বয়সের পার্থক্য ছিল পুরোপুরি ২০ বছর!
এই জয়ে ৭ ম্যাচ থেকে শতভাগ জয়ে ২১ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপে টেবিলের শীর্ষে ফ্রান্স। সমান ম্যাচে ৫ জয় ও ২ হারে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে নেদারল্যান্ডস। আর ৭ ম্যাচে শতভাগ হারে পয়েন্ট টেবিলের নিচে অবস্থান জিব্রাল্টারের।