ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চতুর্থ ধাপের তফশিল ঘোষণা হতেই সুনামগঞ্জের প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলায় লন্ডন প্রবাসীরা প্রার্থী হতে মাঠে নেমে পড়েছেন। ইতোমধ্যে ২৬ জন প্রবাসী দেশে এসে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তাদের সমর্থনে আরও অনেকেই দেশে ফিরছেন।
জানা গেছে, আগামী ২৩ ডিসেম্বর জগন্নাথপুর উপজেলার সাত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ২৫ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই ২৯ নভেম্বর, আপিল ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর। নিষ্পত্তি ৩ ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৬ ডিসেম্বর ও ৭ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। সম্ভাব্য
প্রবাসী প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার, ব্যানার লাগিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পাড়া-মহল্লায় শুরু করেছেন উঠোন বৈঠক। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু জানান, উপজেলার সাত ইউনিয়নে ৪১ জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে ২০ জন প্রবাসী রয়েছেন। এসব প্রবাসী দলের বিভিন্ন পদে থাকায় ইউনিয়ন পর্যায় থেকে তাদের নাম প্রস্তাব এসেছে।
জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের পাড়ারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিক মিয়া বলেন, প্রবাসী হলেও এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে রয়েছি। তাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেশে এসে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।
পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিরাজুল হক বলেন, প্রবাসে থাকা স্ত্রী-সন্তানদের সময় না দিয়ে ইউনিয়নের মানুষকে সময় দিচ্ছি। গত ১০ বছর ধরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাদের পাশে আছি। আশা করছি অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে আবারও সুযোগ পাব।
এ ইউনিয়নে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রিয়াদুল আলম আনসার, রাসেল আহমদ চৌধুরী ও আব্দুল হাই প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আরশ মিয়া বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রবাসী হলেও জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা কমেনি। ৩০ বছর লন্ডন থেকে দেশে এসে গত ১০ বছর ধরে জনগণের সেবা করছি। আশা করছি আবারও সে সুযোগ জনগণ দেবেন।
এ ইউনিয়নে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাবেক চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ, আবুল মোমেন ও ইলিয়াছ আলী প্রার্থী হতে প্রচার-প্রচারণা ও উঠোনবৈঠক শুরু করছেন।
রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী মজলুল হক বলেন, প্রবাসী হলেও গত ২০ বছর ধরে দেশে স্থায়ীভাবে আছি। এখন আর নিজেকে প্রবাসী মনে হয় না। আশা করছি জনগণ আবারও তাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। এ ইউনিয়নে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছালিক মিয়া ও আশিকুর রহমান দেশে এসে প্রচারণা শুরু করেছেন।
সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবুল হাসান বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অল্প ভোটে পরাজিত হই। অধিকাংশ সময় দেশের মানুষের পাশে কাটিয়েছি। মানুষের ভালোবাসায় সাড়া দিয়ে তাদের সেবা করতে মাঠে রয়েছি। এ ইউনিয়নে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুকিত মিয়া, আজহার কামালী, মকসুদ মিয়া কোরেশী, ছালেহ আহমদ ওরফে ছোট মিয়া, আসাদ হোসেন চৌধুরী মাঠে রয়েছেন।
আশারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহ আবু ঈমানী বলেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সারা বছর দেশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করি। প্রবাসে থাকতে এখন মন চায় না। তাই আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ইউনিয়নে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুস ছাত্তার, যুক্তরাজ্য প্রবাসী জমিরুল হক, আবু বক্কর খান ও কাজল মিয়া মাঠে রয়েছেন।
পাইলগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান যুক্তরাজ্য প্রবাসী মখলিছ মিয়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও পরে জনতার চাপে আবারও প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন বলে জানান। এছাড়া এবার নতুন করে প্রার্থী হচ্ছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফারুক মিয়া ও মাহমুদুল হাসান কোরেশী। তারা গণসংযোগ শুরু করছেন। যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফারুক মিয়া বলেন, আমি প্রবাসী হলেও দেশে আমার ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। আমার বাবা ও বড়ভাই এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাই আমি এবার দেশে থাকার সংকল্প নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছি। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, প্রার্থিতার জন্য আমরা বিধি-বিধান অনুসরণ করি। তাই প্রবাসীদের নির্বাচনি বিধি-বিধান মেনেই প্রার্থী হতে হবে।