২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দফায় উপউপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান। প্রথম মেয়াদের সফল সমাপ্তির ধারাবহিকতায় ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে পুনরায় নিয়োগ দেয় সরকার। গত ২২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদও সফলভাবে সম্পন্ন করেন তিনি। সম্প্রতি অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন: শিক্ষকতা ও উপ-উপাচার্য হিসেবে প্রশাসনে দায়িত্ব পালনের মধ্যে পার্থক্য কীভাবে দেখেন?
ড. শাহিনুর রহমান: শিক্ষকতা মানে শিক্ষার্থী আর ক্লাসরুমের সঙ্গে নিবিড় আত্মিক ও নৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে জ্ঞানের সেতু বন্ধন, লালন ও চর্চার এক চলমান প্রক্রিয়া। আর একজন শিক্ষক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেলে তার দায়-দায়িত্ব আরও বেড়ে যায় ঠিকই; তবে মূল পেশা অর্থাৎ শিক্ষক হিসেবে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেই হয়। এই দুই দায়িত্বই সুন্দরভাবে সমন্বয় করতে যিনি সফল হন তিনি হয়ে ওঠেন একজন সফল শিক্ষক ও প্রশাসক।
বা. প্র: অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষ পদে আসীন কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয় সামনে আসছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
ড. শাহিনুর রহমান: প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জ্ঞান-গবেষণার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী হিসেবে সরকার একজন শিক্ষককেই নিয়োগ দেন। শিক্ষকদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অন্যদের চেয়ে বেশি। কারণ, শিক্ষকরা জাতি গঠনের কারিগর। কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যখন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তখন তা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করার ভাষা হারিয়ে যায়। আমরা যদি নিজেদের শিক্ষক মনে না করে পদে আসীন হয়ে শুধু প্রশাসক মনে করি তখনই ভুল হবে। যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য পদে আসীন করা গেলেই এমন অভিযোগ হয়তো কমে আসবে এক সময়।
বা. প্র: ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. শাহিনুর রহমান: ছাত্র-শিক্ষকের মতো এমন মধুর সম্পর্ক পৃথিবীর কোথাও নেই। এই সম্পর্কটি পবিত্র, জ্ঞান-গবেষণার, জীবন গঠনের, নীতি ও নৈতিকতা শেখার এবং শেখানোর। কখনো কখনো অভিভাবক এবং সন্তানের সম্পর্ক এটি। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষককেই অনুসরণ করে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের সাফল্যেই পরিচিতি পায়। কর্মক্ষেত্রে গ্রাজুয়েটরা কেমন করছে এর মাধ্যমেই ব্রান্ডিং হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বড় এ্যাম্বাসেডর। তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোকবর্তিকাবাহী শুভেচ্ছাদূত।
বা. প্র: উপউপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একাডেমিক দায়িত্ব পালনে কতটুকু দায়িত্ববান ছিলেন আপনি?
ড. শাহিনুর রহমান: প্রথমত, আমি একজন শিক্ষক, তারপর আমি উপউপাচার্য। আমার মূল দায়িত্ব শিক্ষকতা। শিক্ষক ছাড়া কখনোই নিজেকে প্রশাসক মনে করিনি। একজন শিক্ষকের এমনটি মনে করাও অনুচিত। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও আমি নিয়মিত ক্লাস নিয়েছি, শিক্ষকতায় কখনো বিঘ্ন ঘটেনি। আমি কখনো একজন শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে যাইনি। দুই মেয়াদে উপউপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছি ঠিকই, কিন্তু ক্লাস ছিলো সবকিছুর আগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনাসহ শিক্ষার্থীদের সেবা দেয়াই ছিল আমার প্রধান লক্ষ্য।
বা. প্র: দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। উপউপাচার্য হিসেবে আপনি কতটা সফল?
ড. শাহিনুর রহমান: আমি কতোটা সফল সেই উত্তর দিতে পারব না। আমার প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সহকর্মীরা এটি বলতে পারবেন। তবে সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সাথে আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। এছাড়া আমার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সহকর্মীদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে সবসময় সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি, যার ফলে সুষ্ঠুভাবে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন পরিচালিত হয়েছে বলে আমি বিশ^াস করি। বিশ^বিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন- সবার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।
বা.প্র: উপ-উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলেন। সরকারের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
ড. শাহিনুর রহমান: মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমি সর্বোচ্চ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার ওপর আস্থা রাখায় আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। শিক্ষকতা আমার পেশা ও একমাত্র কাজ। পেশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কোন দায়িত্ব দেয়া হলে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালনের চেষ্টা করব।
বা. প্র: বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন কী?
ড. শাহিনুর রহমান: মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও একজন শিক্ষক হিসেবে বলতে চাই, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের উচিত দেশকে ভালোবাসা। আজকের তরুণ-তরুণীরা আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে। বাস্তবসম্মত আধুনিক জ্ঞানলাভের পাশাপাশি আদর্শ মানুষ হিসেবে তাদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আগামীর বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে।
সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন