1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ অপরাহ্ন

ফেনীতে বাড়ছে সংক্রমণ, প্রস্তুতি বাড়িয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২০

ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীতে ফের বাড়ছে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে আগের থেকে প্রস্তুতি বাড়িয়েছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) ৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ১১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ হিসেবে প্রতি ৫টি নমুনার মধ্যে একটি পজিটিভ এসেছে। সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন এ তথ্য জানান।
তিনি আরও জানান, গত ৪ দিনে মোট ২৮১টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৯ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। আর জেলায় করোনা শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৩ জনে। মোট ১২ হাজার ২৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ১৭.২২ শতাংশ।
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ জানায়, সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে জেলার সবকটি সরকারি হাসপাতালকে ডেডিকেটেড করে ১০ শয্যা চালু করা হলেও প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জনবলের সংকট রয়েছে। সাধারণ রোগীর সঙ্গে করোনা আক্রান্তদের ভর্তির সিদ্ধান্তে যেমন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে, তেমনি সেবাদান ব্যাহত হওয়াসহ দ্রুত পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত করতে না পারলে ফের রোগীদের ভোগান্তি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া সরকার পর্যায়ক্রমে সব জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেও সেটি এখনো কাগজে কলমে রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধ্যান করে জানা যায়, জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ১৬ এপ্রিল। এরপরই প্রতিদিন আক্রান্তের তালিকা বাড়ছে। ফলে ৭ মাসে রোগী দাঁড়ায় ২১শ, এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন ৪২ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তার সংখ্যা শতাধিক।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, প্রথম ধাপে চিকিৎসায় ব্যাপক হিমশিম খেতে হলেও দ্বিতীয় ধাপ সামলাতে প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। ইতোমধ্যে দেশে এই প্রথম কোনো জেলায় বেসরকারি উদ্যেগে জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও হাইফ্লো অক্সিজেন চালু হয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে আইসিইউ বেড।
ফেনীর সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন বলেন, ফেনীতে কোভিড টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, ডেডিকেটেট হাসপাতালের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সিলিন্ডার সরবরাহ বাড়ানো হচ্ছে। পিসিআর ল্যাব ছাড়াও এ জেলায় জিন এক্সপার্ট মেশিনে করোনা শনাক্তের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি মেশিন সচল আছে আরো দুটি মেশিন সংযোজনের প্রক্রিয়া চলছে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধু ডেডিকেটেড ছাড়া সাধারণ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি হলে রোগীর চাপে সেবায় যেমন হিমশিম খেতে হয় তেমনি অন্যদের সংক্রমণের শঙ্কাও থাকে বেশি। পাশাপাশি তাদের নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন, জনবল, বিটিএমসহ পরিবহন ব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে কথা হয় ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মো. ইকবাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে একটা সমস্যা হতে পারে, তা হলো জনবল সংকট। জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হতে পারে। এ ঢেউ সফলভাবে সামলাতে হলে সব পর্যায়ে সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে।
তবে এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী। তিনি বলেন, করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। জনবলের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছি।
এদিকে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমার পর মানুষের মধ্যে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিলো না। তাই এটি কার্যকরে জোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানো এবং বাধ্য করানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। মাস্ক না পরলে জরিমানার পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে কারাদণ্ডও।
এদিকে সেবার মান বাড়াতে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিজস্ব অর্থায়নে লিকুইড অক্সিজেনের ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। শিগগিরই অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য স্বাস্থ্যবিভাগের দেওয়া তথ্যমতে ফেনীতে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে জেলায় মোট ১ হাজার ৭৯৩ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। আর করোনা ভাইরাসে জেলায় মোট ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফেনীতে সুস্থতার হার প্রায় ৮৪.৮৫ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার প্রায় ১.৯ শতাংশ।
এ পর্যন্ত ফেনীতে শনাক্ত ২ হাজার ১১৩ জন রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে ফেনী সদরে ৮৫৩ জন। শনাক্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দাগনভূঞা উপজেলা।
এ উপজেলায় মোট শনাক্ত করা হয়েছে ৪১০ জন। এরপরে রয়েছে সোনাগাজীতে ২৭৬, ছাগলনাইয়ায় ২৬৭, পরশুরামে ১৫১ ও ফুলগাজীতে ১২৯ জন। এছাড়া ফেনীর বাইরের ২৯ জন রোগী রয়েছে।
শনাক্তকৃত মোট করোনা রোগীর প্রায় ৪০.৩৬ শতাংশ রোগীই ফেনী সদরের বাসিন্দা। করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ফেনী সদরে ১৪ জন, সোনাগাজীতে ১১, দাগনভূঁঞায় ৮, ছাগলনাইয়ায় ৬ ও পরশুরামে ৩ জন রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি