নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেসরকারি, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ফাঁদ পেতে বসেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই বড় বড় ভবন ভাড়া করে ও আলো ঝলমল সুসজ্জিত চটকদার বিজ্ঞাপনে সিন্ডিকেট সদস্যরা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অনুমোদনহীন ও অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর সিন্ডিকেটের সদস্যরা নতুন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন করা না হলেও তড়িঘড়ি করে বৈধতার ভুয়া তথ্য দেখানো হচ্ছে। নিবন্ধনের জন্য অনলাইলেও আবেদন করা হচ্ছে। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগে পাঠানো ফেনীর বৈধ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা নিয়ে বিশাল ফারাক দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ফেনীর ১১৩টি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ৮১টির অনুমোদন নেই। ৬০টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ২৫টি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র মেয়াদোত্তীর্ণ। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তোয়াক্কা করছে না। এদিকে নিবন্ধন ও লাইসেন্স না থাকায় ফেনীর দুটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ছাগলনাইয়া চক্ষু হাসপাতাল ও ফেনী শহরের মুক্তবাজার বায়েজীদ সাইকিয়াট্রিস হাসপাতাল। নবায়ন শেষ হওয়া হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মধ্যে রয়েছে-ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতাল, জনতা ক্লিনিক, ফেনী প্রাইভেট হাসপাতাল, ফেনী হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, আল আহাদ চক্ষু হাসপাতাল, ডক্টরস ল্যাব অ্যান্ড শাহিন ক্লিনিক, শতাব্দী ডায়গনস্টিক সেন্টার, মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বায়েজিদ হেলথ কেয়ার, সোনালী ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া রয়েছে উপজেলা শহরের কয়েকটি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ৫-৬ বছর লাইসেন্স নবায়ন না করেই এসব প্রতিষ্ঠান দিব্যি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে অফিস সহকারী মো. এমরান বলেন, এসব হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স ছিল। তাই এগুলোকে তালিকায় দেখানো হয়েছে।
জানা গেছে, ফেনী জেলার অলিগলিতে অসংখ্য অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কেবল অনুমোদনের আবেদন করেই অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জটিল অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। এতে দরিদ্র ও অসহায় রোগীরা প্রতারণা ও ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর এসব হাসপাতাল ক্লিনিক চলছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, ২৪ জানুয়ারি ফেনীতে লাইসেন্সবিহীন ৪৪টি হাসপাতাল ও ৩৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পাঠানো তালিকায় ৫৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেখানো হয়েছে। ১১ কর্মদিবসে লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পালটে গেছে!
এমন তালিকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ১৪ দিনের ব্যবধানে কী করে এত সংখ্যক প্রতিষ্ঠান বৈধ হলো।
তারা জানান, এটি সিন্ডিকেটের কাজ। সিভিল সার্জনদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ না থাকলেও ফেনী সিভিল সার্জন নিয়মিত ছাগলনাইয়া স্কয়ার হাসপাতালে চেম্বার করছেন।
ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, যেসব হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন নেই সেগুলোকে নোটিশ করা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে ও নবায়নের শর্ত পূরণ করলে অনলাইনেও ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। ফুলগাজীতে একটি হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফেনী জেলা হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকা আর লাইসেন্স না থাকা এক জিনিস নয়। আমরা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। সরকার বিভিন্ন কারণে লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন লাইসেন্স দিচ্ছে না। সরকারের উদাসীনতার কারণে আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি।