রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বুধবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমেছে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৪ শতাংশের মত। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ দিনে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা; যা আগের বছরের ফেব্রুয়ারি (২৯ দিন) মাসে ছিল ৩৩২ কোটি টাকা।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ২ হাজার ৫৮৬ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং বর্তমান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ কম।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ২৬২৪ কোটি ডলার।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের বাজারে কাঙ্ক্ষিত গতি আসছে না।
আট মাসের হিসাবে নিট পোশাক রপ্তানি গতবছরের একই সময়ের তুলনায় বাড়লেও উভেন পণ্যে রপ্তানি ক্রমাত কমছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ১৩৪ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে এক হাজার ৮৯ কোটি ডলার ছিল।
অর্থাৎ, আট মাসে এই খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। এই অংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৯৬৯ কোটি ডলারের উভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের আট মাসের তুলনায় সাড়ে ১১ শতাংশ কম। জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে এ খাতে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল।
বিকেএমইএ ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “মহামারীর মধ্যেও যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, পরিস্থিতি তার চেয়ে ভালোর দিকেই যাচ্ছিল। তবে সুতার অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।”
তিনি জানান, মহামারীর কারণে উভেন পণ্যের চাহিদা কমে নিটপণ্যের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সুতার দাম বাড়ার কারণে এখন নিট পণ্য রপ্তানি করে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
“নিটপণ্যগুলো সুতানির্ভর। দেড় ডলারের সুতা এখন প্রায় চার ডলারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা দাম বাড়াতে চাইছে না। এ পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলো কঠিন হবে।”
সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে সুখবর না এলেও ফেব্রুয়ারি মাস শেষে আট মাসে ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে। জুট ইয়ার্ন বা পাটের সুতা রপ্তানিও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
একইভাবে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি খাতে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ৩৮ শতাংশ, ওষুধ রপ্তানিতে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং চামড়ার জুতা রপ্তানিতে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অন্যদিকে এই সময়ে হিমায়িত মাছ রপ্তানি আগের বছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১০ শতাংশ, চিংড়ি রপ্তানি ১৮ শতাংশ, সিরামিক পণ্য ১৩ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ৪ শতাংশ কমেছে।