বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় প্রায় ১শ বিঘা জমিতে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে প্রায় এক মাস আগে ধানের চারা রোপণ করা হয়। সেই চারাগুলোতে এখন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি দেখা যাচ্ছে।
মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গত ২৯ জানুয়ারি শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামে দুই জাতের ধানের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে এখন ‘পাখির চোখে’ (ওপর থেকে তোলা ছবিতে) বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ এক রূপকল্প ফুটে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গঠিত জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে এবং ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানির অর্থায়নে প্রতিকৃতিটি তৈরি করা হয়।
শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের সদস্য সচিব কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান সভাপতিত্বে চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
আয়োজকরা জানান, প্রতিকৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে গিনেজ বুকে স্থান দেওয়ার জন্য গত বছরের মার্চ মাস থেকে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু কর্মসূচির কাজ শুরু করা হয়। সোনালি এবং চীন থেকে আমদানি করা বেগুনি রঙের (এফ-১) ধানগাছে ফুটিয়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। প্রকল্পটির ব্যবস্থাপক এবং ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ারের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান জানান, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলার মধ্যেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে রেকর্ড গড়ার জন্য গিনেজ ওয়াল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে। আশা করা যাচ্ছে, ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিনে নতুন এই বিশ্ব রেকর্ড অর্জন উদযাপন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আজীবন লড়াই করেছেন মানুষের ভাত-কাপড়ের অধিকার ও কৃষকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে। তাই দুই রঙের ধান গাছই বেছে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকার জন্যে। বেগুনি রঙের ধান ব্যবহার করে আঁকা হয়েছে জাতির পিতার বিশাল প্রতিকৃতি। ফিল্ড ট্রায়াল সম্পূর্ণ করা জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। ১শ বিএনসিসি ক্যাডেটকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ কাজের জন্য তৈরি করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন যানবাহনে অনেক মানুষ এখানে দেখতে আসছেন। জমিতে এমন চাষ দেখে সবাই খুশি। সাধারণভাবে এই ছবি দেখা যাচ্ছে না। তবে পাখির মতো ওপর থেকে দেখা যাচ্ছে ক্যামেরার মাধ্যমে। আয়োজকরা আরও জানান, ১শ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ভিন্নভাবে এই চিত্রকর্মের উদ্দেশ্য গিনেস বুকে স্থান করে নেওয়া। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তথ্যানুযায়ী সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র ২০১৯ সালে চীনে তৈরি করা হয়, এর আয়তন ছিল ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট। বাংলাদেশের শস্যচিত্রের আয়তন হবে প্রায় ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট বা ১ লাখ ২০ হাজার বর্গমিটার। শস্যচিত্রটির দৈর্ঘ্য ৪শ মিটার ও প্রস্থ ৩শ মিটার। এটিই একক ব্যক্তি হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি। এ কাজে ১ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন নারী শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পুরুষ শ্রমিক ছিল। তাদের সমন্বয়ে এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
এর আগে ১৩ রেজিমেন্টের বিএনসিসির ১০০ জন করে সদস্য প্রতিকৃতি তৈরির কাজ করেছে। একদল শুকনো জমিতে প্রতিকৃতি নির্মাণ করেছে। আরেকদল কাঁদা জমিতে লে-আউট তৈরি করেছে।
বগুড়ার আজিজুল হক সরকারি কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান, সরকারি শাহ সুলতানসহ আরও অনেক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। এই ১০০ বিঘা জমি স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সাত মাসের (নভেম্বর থেকে মে) জন্য ইজারা নেওয়া হয়। এই ফসল উঠে গেলে কৃষকরা আবার তাদের জমি ফেরত দেওয়া হবে।