গতকাল ২৬ মার্চ শুক্রবার, বিনম্র শ্রদ্ধা ও আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস, স্টকহোমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস-২০২১ পালিত হয়েছে। দিনের শুরুতে দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কার্যক্রম শুরু হয় এবং বিকেলে অনলাইন-জুম-প্লাটফর্মে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সুইডেন, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ অনলাইনে অংশগ্রহন করেন। রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্ব করেন এবং দূতাবাসের প্রথম সচিব আমরিন জাহানের সঞ্চালনায় দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন দূতাবাস প্রাঙ্গন থেকে সরাসরি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ এবং অংশগ্রহণকারী অতিথিদের সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতীকী স্মৃ্তিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বানী পাঠ করেন যথাক্রমে রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম, প্রথম সচিব আমরিন জাহান এবং প্রথম সচিব মোরশেদুল মিল্লাত। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত একটি ভিডিও-বার্তা অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রদত্ত সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং মন্ত্রীদের শুভেচ্ছা বার্তাগুলোও প্রদর্শন করা হয়।
অনলাইন-অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুইডেন, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশী এবং বিদেশীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতা দিবসের উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ও গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলোর কথা তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙ্গালি জাতির মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে এ দেশের আপামর জনগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও তিন লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতা। স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা, অর্থনীতি সহ সকল ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছিল। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং সাহসী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ এখন সফলতার উচ্চশিখরে অবস্থান করছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তাঁরা বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যের সূচনায় স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অপরিসীম অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি ৩০ লক্ষাধিক শহীদের আত্মত্যাগ এবং ২ লক্ষাধিক মা ও বোনের সম্ভ্রমহানীর বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুদৃঢ় নেতৃত্বে আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কৃষক, শ্রমিক এবং প্রবাসীদের কষ্টার্জিত শ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে এবং আমরা আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি বেশ স্বস্তির সাথে।’
স্বাধীনতার সময় এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সুইডেন, নরওয়ে এবং ফিনল্যাণ্ড এর সহায়তার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সামগ্রিক অগ্রগতিতে শুধু উচ্ছ্বসিতই নয়; বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগেও তাঁরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহনের আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সুইডেন, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ডে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশী শিশুদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী প্রতিযোগীদের নাম ঘোষণা করা হয়।