বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল এন্টারপ্রিনিউরশিপ প্রজেক্ট (পিআরআইডিই) প্রকল্পের আওতায় ৫০০ মিলিয়ন অথবা ৫০ কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। এ অর্থের প্রায় ৪৬৭.৫০ মিলিয়ন ডলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
শনিবার (১৭ এপ্রিল) বেজা থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে বিশ্বব্যাংক ও বেজার মধ্যে গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে বিশ্বব্যাংকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন ও বেজার পক্ষে স্বাক্ষর করেন নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।
জানা গেছে, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর সরকারি অর্থায়ন ৩৭৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ১ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
বেজা জানায়, বিশ্বব্যাংকের এ অর্থের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যয় করা হবে। এ শিল্পনগর দেশের শিল্প খাতের জন্য মডেল হিসেবে কাজ করবে। ৩০ হাজার একরেরও বেশি আয়তনের এ নগরে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক ও শিল্পজোন হিসেবে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও অর্থনীতির এক মহাজংশন হিসেবে প্রস্তুত হচ্ছে শিল্প নগরটি।
অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানায়, দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও ভূ-কৌশলগত সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানের ফলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। দেশি-বিদেশি নামিদামী কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে এগিয়ে এসেছে। যাদের মধ্যে রয়েছে- বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস, টিকে গ্রুপ, ওয়ালটন, সামিট, বসুন্ধরা, জিপিএইচ, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ইত্যাদি। এই শিল্পনগরের ২অ ও ২ই, ৩, ৪ এবং ৫ জোনগুলোর প্রায় দুই হাজার একর এলাকায় শিগগিরই শিল্প ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
বেজা আরও জানায়, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১২টি শিল্প স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এ বছরের মধ্যে অন্তত ছয়টি শিল্প উৎপাদন শুরু করবে। উদ্যোক্তারা একক অথবা যৌথ উদ্যোগে গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার, ইস্পাত ও লৌহজাত শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, রাসায়নিক দ্রব্য, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম, ওষুধ, টেক্সটাইল, কন্টেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, ভোজ্যতেল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, মোটরযান বা অটোমোবাইল, আইটি, বিভিন্ন সেবাখাতে বিনিয়োগ ও শিল্প কল-কারখানা স্থাপন করছে।
ইতোমধ্যে এ শিল্পনগরের জন্য প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা পড়েছে। যার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে শিল্প-কারখানা ছাড়াও মীরসরাই-সীতাকুণ্ড ঘেঁষে বঙ্গোপসাগর উপকূলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কন্টেইনার বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার সামুদ্রিক সুপারডাইক বা প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শেষের পথে। ২৩০ কেভিএ গ্রিড স্টেশন, শেখ হাসিনা সরণি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৮টি কালভার্ট, দুই লেনের ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ১৭ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ লাইন নির্মিত হয়েছে।