আজ ৮ আগস্ট, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা, বাঙালির স্বাধীনতার লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনে নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন মহীয়সী এই নারী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিক লেখনীতে বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নেপথ্য ভূমিকা উঠে এসেছে। আন্দোলন-সংগ্রামে নীরব সমর্থন, শক্ত হাতে সংসার মোকাবেলা এবং সন্তানদের মানুষ করার পাশাপাশি তিনি বঙ্গবন্ধুকে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে উৎসাহ দিয়ে গেছেন।
স্বামীর জেল-জুলুম এমনকি ফাঁসি হতে পারে জেনেও তাকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেননি। বরং ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার বার্তা দলের নেতাকর্মীদের পৌঁছে দিতেন তিনি। ক্ষেত্রবিশেষে নেতাকর্মীদের পরামর্শ এমনকি সিদ্ধান্তও দিয়েছেন অকুতোভয় এই নারী। বলা হয়ে থাকে, শেখ মুজিব দীর্ঘ আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে শুধু বাঙালি জাতির পিতা নন, বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছিলেন তারই প্রেরণায়।
বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অফুরান প্রেরণার উৎস হয়ে ছিলেন বেগম মুজিব। বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ছয়-দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারে বারে পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দি, তখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বঙ্গমাতার কাছে ছুটে আসতেন। তিনি তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা বুঝিয়ে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাতেন।
আগরতলা যড়যন্ত্র মামলায় প্যারোলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি নিয়ে একটি কুচক্রী মহল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এই মহীয়সী নারী পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সপরিবারে খুনি চক্রের নির্মম বুলেটের আঘাতে শহীদ হন।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে ‘বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের নেপথ্যের সংগঠক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ।
এছাড়াও বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে আরও দুটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর একটির আয়োজনে রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।অপর আলোচনা সভাটি হবে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের আয়োজনে এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
এদিকে মহিলা লীগের উদ্যোগে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিনে অসহায় ও দুস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিকালে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।