বরিশারে সদর ইউএনও এর বাস ভবনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্রকরে রাজনৈতিক দল ও সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে এক ধরনের ভুল বার্তা প্রাকাশিত হয়েছে। ঘটনা যাই ঘটুক, এতটা বাড়াবাড়ি সমীচীন হয়নি। সংবাদ মাধ্যমের উচিত ছিল এ ধরনের সংবাদ পরিবেশনে আরো দায়িত্বশীল যত্নবান এবং তথ্যানুসন্ধান করা। বরিশালে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এবং বিএম কলেজের সাবেক ভিপি জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা আনোয়ার হোসেন যে ব্যাখ্যা ঘটনার সম্পর্কে দিয়েছেন তাতে বিষয়টি পরিষ্কার। রাতে সিটি করপোর্রশেন পরিছন্নকর্মীরা আবর্জনা পরিষ্কারের নির্ধারিত সময়ে ইউএনও এর বাসার সামনে প্রধান সড়কে আবর্জনা সহ-মেয়াদ উত্তীর্ণ পোষ্টার ও ব্যানার অপসারন করছিল। সদর রাস্তার মুখে সিটি করপোরের্শন কর্মীরা পরি”ছন্ন কাজ করছিল। সেখানে তাদেরকে বাঁধা দেন ইউএনও’র বাসার সামনে রাস্তায় প্রহরারত আনসার সদস্যরা। প্রশ্ন হলো আবর্জনা কিংবা পোস্টার সরানের কাজে আনসার সদস্যরা বাঁধা দিতে গেল কেন? তারপর আনসার সদস্য ও সিটি করর্পোরেশনের কর্মীদের কোন এক অজ্ঞাত কারনে বাকবিতন্ডা ঘটে।
কিন্তু সেটি মিমাংসা করার জন্য রাতে বাসভবন থেকে ইউএনও বের হয়ে রাস্তায় এসে তাতে অংশ নিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হলো কেন ? প্রশ্ন হলো ইউএনও কি দায়িত্ব এবং এখতিয়ার সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলেন? রাস্তায় দু’সংস্থার মত পার্থক্য থামাতে ইউএনও কেন বাসা থেকে বের হলেন? তিনিতো থানা, পুলিশ প্রশাসন ও মেয়রকে ফোনে অবহিত করতে পারতেন। যেটা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাসা থেকে রাত্রি বেলায় রাস্তায় এসে ঝগড়া লাগানো ইউএনওর কাজের আওতায় পড়ে কিনা সেটি এখন সবার কাছে প্রশ্ন।
রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে মত বিরোধ, লাইক ডিজলাইক থাকতে পারে এ নিয়ে সংঘাতের ঘটনাও ঘটে। কিন্তু এ সব ঘটনায় প্রশাসনের জড়িত হবার কোন সুযোগ নেই। খুবজড় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত গড়ায়। তারা দু’পক্ষকে নিবারনের চেষ্টা করে। তার পর শেষ। কিন্তু বরিশালের ইউএনও যেটি করেছেন, সটি তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়েনা। রাজনৈতিক নেতা আনোয়ারের কথায় তু”ছ ঘটনা এবং কোন ঘটনাই ঘটেনি ইউএন এর সঙ্গে। কিন্তু ইউএনও কেনো অতি উৎসাহিত হয়ে বাসার বাহির হয়ে দু’সংস্থার ঝগড়ায় জড়িত হলেন। ব্যানার যে কারো নামের হোক। অপসারণ কিংবা সংরক্ষন এর দায়িত্ব প্রশাসনের কাজ নয়। এটা রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কাজ। মেয়াদউত্তীর্ণ ব্যনার আবর্জনা হলে অপসারনের কাজ সিটি কর্পোরেশন এর। এখানেই তুচ্ছ ঘটনা ইতি ঘটতে পারতো। তারপর ঘটনার ইতি তো ঘটেইনি। বরং জাতীয় পর্যায়ে চলে আসে।
বরিশালে ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিজিবি মোতায়নের মতো ঘটনা ঘটে। কার বিরুদ্ধে বিজিবি। রাজনৈতিক নেতৃত্বেই সরকার চলবে। এটাই সংবিধান। রাজনীতিই সব নিয়ন্ত্রন করবে । প্রশাসন নয়। প্রশাসনে অনেকেই আজকাল দেখা যায়, এমনি কোন অফিসার সাধারন মানুষের সঙ্গে কোন কাজের জন্য গেলে সু-ব্যবাহার করেনা। বাড়তি কিছু বলতে গেলে কর্মকর্তারা কয়েকজন মিলে সংঘ করেন। কিন্তু দলের লোকেরা অসহায়। আর দলের সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অশুভ আচরন পেয়ে মুখ বুঝে ক্ষোভ নিয়ে বের হয়ে ফিরে আসতে হয়। কারণ প্রতিবাদ করলে খবর হয়ে যাবে। সরকারের বদনাম হবে। দলের বদনাম হবে। তারপরও যে হয় না। তা কিন্তু‘ নয়। অনবিগ্রেত ঘটনা যে ঘটনা তা কিন্তু নয়। কিন্তু এসব নিয়ে বিচার বিশ্লেষন হয়না?
বরিশালের ঘটনাকে এমনি জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে আনা হয়েছে। যাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মহাসচিব মির্জা ইসলাম বিবৃতি দিয়ে ঘটনাকে আরেক দফা এগিয়ে নিতে সাহয্য করেছে। বাস্তাবতা হলো প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিতরা তাদের নিয়ম ও এখতিয়ারের ভেতরে থেকে কাজ করলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সিভিল সার্ভিস অফিসার সমিতির বিবৃতি রাজনৈতিক নেতৃত্বেকে হতবাক করেছে। রাজনীতিক দলের সরকার গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করবে এটাই সংবিধান এর বাহিরে ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীরা সরকারের অধীন। কিš‘ কার বাসার সামনে কোন নেতার ব্যানার থাকবে না অপসারণ করা হবে, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার দায়িত্ব ইউএনওর নয়।
সাংবাদিক মামুদা ভাট্রি জোড় গলায় বলেছেন ‘সবার জন্য ঘর মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার’ এই ঘর নির্মানে যে দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সবগুলোর দায়িত্ব পালনরত ইউএনওদের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার নিয়ম অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যব¯’া নিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীবাহিনী কোন ইউএনওকে হামলা করতে যায়নি। অথচ কাজটি রাজনৈতিক দলের সরকারের কর্মসূচী। অপর দিকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা করার সমন্বয় করা জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রত্যেকটি জেলায় একজন সচিব নিয়োগ দিয়েছিলেন। বছর পার হয়ে গেল ২/১ জন সচিব ব্যতিত কোন সচিব নিজ নিজ জেলায় যাননি। কোন সভা করেননি এমন অভিযোগ স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিদেশে বেগম পাড়ায় বাড়ি সবচেয়ে বেশি। বেশ কিছু টুকরো খবরে উনাদের একটু ব্যথা লাগতেই পারে। তবে রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কখনো অনবিপ্রেত কোন ঘটনায় প্রজাতন্ত্রের লোকদের সঙ্গে বিবাদে জড়ানো সমীচীন নয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরাই মূলত সরকার। দল আসে যায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই থাকেন। এসব বিবেচনায় থাকতে হবে।