চারিদিকে বাহারি হাজারো ফুলের সমারোহ। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছি, প্রজাপতি।
বাহারি ফুল বাড়িয়ে দিয়েছে গোটা এলাকার সৌন্দর্যও। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাঙ্গণ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। ফুলে ফুলে সজ্জিত ক্যাম্পাস যেনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য্যমুগ্ধ কোনো ছবি। দেখে মনে হচ্ছে বসন্ত যেন তার পুরো রং-রূপ ঢেলে দিয়েছে ক্যাম্পাসে।
বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের এ মাহেন্দ্র ক্ষণে ইট-পাথর আর কংক্রিটের শহরে সবুজের সান্নিধ্য খুঁজে পেতে দর্শনার্থীরা আসছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিবছর বসন্ত বরণের জমকালো আয়োজন থাকলেও এবার করোনার কারণে কোন আয়োজন নেই। তবে ফুল প্রেমীরা ফুলের রাজ্যে আসতে ভুল করছেন না। ফাগুনের মাতাল হাওয়া নিস্বর্গ প্রকৃতিতে কিছুটা সময় পার করছেন। ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্ত, যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত আর আনন্দ, উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দূর দূরান্ত থেকে তরুণ-তরুণীরা ছুটে আসছেন ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা আব্দুল্লাহ নামের এ দর্শনার্থী বলেন, খুবি ক্যাম্পাসের ফুল যে কাউকেই বিমোহিত করবে। যে কারণে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ভীষণ ভালো লাগছে। তাই নয়নাভিরাম এই মনমুগ্ধকর দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে নিয়ে যাচ্ছি।
আব্দুল্লাহর মতো ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রেমিক-প্রেমিকারাসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের আনাগোনা দেখা যায় খুবি ক্যাম্পাসে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অদূরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘কালজয়ী মুজিব’ এর সামনে, প্রশাসনিক ভবনের সামনে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনে বেশি ফুল ফুটেছে। হৃদয়কাড়া ফুলের মন মাতানো সৌরভ আর স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ সবাই। ফুলের সৌন্দর্য ব্যঞ্জনায় যেন স্বর্গীয় রূপ ধারণ করেছে খুবি। গাঁদা, আকাশি সাদা স্নোবল, সালভিয়া, দোপাটি, ক্যালেন্ডোলা, দায়েনথাঁচ, ফ্লোগর্স, ইন্টালিয়াম, স্নাকড্রাগন, পেনজি, কারিয়াফছি, ভারবিনা, পিটুনিয়া, স্টার গোল্ড, মৌচন্ডা, পানচাটিয়া, অ্যালমন্ডা, গ্লাডিয়া, তালপাম্প, চন্দ্রমল্লিকা, ইনকা গাদা, চায়নিজ গাদা, জাম্বুস গাদা, মোরগ ঝুঁটি, কসমস, জুঁই, চামেলি ছাড়াও আছে টগর, বেলি এবং সাইকাস, ক্রিসমাস, জবা, রঙ্গনসহ নানা জাতের ফুল। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ ধরণের ফুল ফুটেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসের গাছে গাছে আমের মুকুল। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মৌ মৌ গন্ধ। মৌমাছিরাও ব্যস্ত মধু আহরণে।
ফুল বাগানের মালি মো. রেজাউল করীম বলেন, প্রায় ৩০-৪০ প্রজাতির ফুল এখন ফুটে আছে বাগানে। ফুলের বাগান পরিচর্যা করতে ৮-১০ মালি রয়েছেন। যখন যে ফুলের সিজন থাকে সেই ফুলের চারা লাগানো হয় বাগানে। এবার বেশি ফুটেছে ইনকা গাদা, সালভিয়া, জাম্বু গাধা, ক্যালেন্ডোলা, পিটুনিয়া, গোলাপ।
খুবির জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এসএম আতিয়ার রহমান বলেন, শীতকালীন নানা প্রজাতির প্রস্ফুটিত এই ফুলের সমারোহে এখন সুশোভিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আর এ মনোমুগদ্ধকর ক্যাম্পাস দেখতে আসছেন প্রতিদিন প্রচুর দর্শক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদ্যোগ বিভিন্ন মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। মানুষ সুন্দরের পূজারী। যে কোনো জিনিসকে সুন্দর করে সাজাতে ফুলের জুড়ি নেই। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বহুকাল আগে তার কবিতায় লিখেছেন- ‘জোটে যদি মোটে একটি পয়সা/ খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি,/ দুটি যদি জোটে অর্ধেক তার,/ ফুল কিনিও হে অনুরাগী। ’ সে দিক বিবেচনা করে বিগত বছরগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগিয়ে শোভা বর্ধন করছে। ২০১৯ সালে খুবির ষষ্ঠ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ক্যাম্পাসের ফুলের মোহনীয় সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রসংশা করেছেন। ফুঁটে থাকা নানা রঙ বেরঙের হাজারো ফুলের সমারোহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ যেমন সুন্দর তেমনি ক্যাম্পাসও ফুলে ফুলে সুসজ্জিত।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অদূরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘কালজয়ী মুজিব’ এর সামনে এবার সবচেয়ে বেশি ফুল ফুটেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনের সামনেও নানা রকম ফুল ফুটেছে। দূর দূরান্ত থেকে ফুল প্রেমীরা ক্যাম্পাসে এসে ফুলের সাথে প্রতিনিয়ত ছবি তোলেন।