ভারত বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ করা নিয়ে এ মন্তব্য করেছেন তিনি।
একই সঙ্গে ভারতের অঙ্গভঙ্গি বাংলাদেশের জন্য বেশ সম্মানের বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শনিবার থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে জি-২০ সদস্য দেশগুলোর দুই দিনের এই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে সদস্য, পর্যবেক্ষক ও আমন্ত্রিত দেশের শীর্ষনেতারা উপস্থিত হয়েছেন।
এ ছাড়া জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে নয়াদিল্লিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সদস্য না হলেও সম্মেলনে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পাওয়া ‘অতিথি দেশগুলো’র মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোয় শনিবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ভারতের অঙ্গভঙ্গি তাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্মান।
মোমেন বলেন, সম্মেলনের পুরো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে উৎসাহিত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এএনআইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমরা খুব গর্বিত এবং প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা)ও উল্লেখ করেছেন যে- ভারত আমাদের অতিথি দেশ হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে আমাদের সম্মানিত করেছে এবং আমরা ভারতের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের সম্মান দিয়েছে এবং একইসঙ্গে গ্লোবাল সাউথের সমস্যাগুলো উত্থাপন করার জন্য সুযোগও দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের সমস্যাগুলো উত্থাপন করে আসছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনে নেতা, আমরা নারীর ক্ষমতায়নে নেতা, আমরা দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়গুলোকে জি-২০ নেতৃত্বের সামনে তুলে ধরেছেন।’
এর আগে শুক্রবার ভারতে পৌঁছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একই দিন নয়াদিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেন। পরে দুই দেশ ডিজিটাল পেমেন্ট মেকানিজমের ক্ষেত্রে সহযোগিতাসহ তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে।
কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রকল্প ২০২৩ থেকে ২০২৫ এবং দুই দেশের মুদ্রার বিনিময় সহজতর করা নিয়ে ওই তিনটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও শেখ হাসিনা ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সিইপিএ) বিষয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য উন্মুখ ছিলেন। এছাড়া বৈঠকে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক ও জনগণের মধ্যে সংযোগসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সম্পূর্ণ পরিসর নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করেন।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক আঞ্চলিক নানা ঘটনা এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতার মতো ইস্যুগুলো নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, এই প্রথম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ভারত। সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, ইতালি, আফ্রিকান ইউনিয়ন (প্রতিনিধিত্ব করছে কমরোস), দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, জাপান, সৌদি আরব, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, মরিশাস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সিঙ্গাপুর।