নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনাভাইরাস মহামারীতে অন্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ লকডাউনসহ সরকারের সিদ্ধান্তগুলো বেশি মেনেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
শনিবার দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের আয়োজনে এক ভার্চুয়াল সেমিনারে মন্ত্রী একথা বলেন।
করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তারের পর জনসচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তাজুল বলেন, “আমরা লকডাউন করেছি। মানুষ যাতে সেটা মানে সে চেষ্টা করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের স্কোরটা কিন্তু বেশি না। তারপরেও দেখা গেছে আমাদের লোকেরা যতটুকু মানুছে। পৃথিবীর খুব কম দেশেই লকডাউন বা সরকারি সিদ্ধান্তগুলো মানতে রাজি হয়েছে।
মহামারীর মধ্যে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মকে নগন্য আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন, ৬২ হাজার জনপ্রতিনিধির মধ্যে ৫ শতাংশেরও কম অনিয়মে জড়িত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভার্চুয়াল এই সেমিনারে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়েছে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এমএইচ চৌধুরী (লেনিন) অভিযোগ করেন।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান লেনিন বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি টেস্টের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু আজ পর্য়ন্ত সেটি হয়নি।
একই সময়ে আমরা একধরণের দ্বৈত ব্যাপার দেখি। অ্যান্টিবডি টেস্ট আইন অনুমোদিত নয়। কিন্তু আইসিডিডিআর,বি এবং আইইডিসিআর অ্যান্টিবডি টেস্ট করে একটি সার্ভে করার চেষ্টা করেছে। ফলাফলে দেখা গেছে, ঢাকার ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত। দুদিন পর আইইডিসিআর বলেছে এটি যথাযথ নয়। বিষয়টা কী বিজ্ঞানভিত্তিক না অনুমানভিত্তিক? এই ধোঁয়াশা থেকে মানুষকে বের করতে আনতে হবে।
এমএইচ চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞানের কাজগুলো বিজ্ঞান দিয়ে করতে হবে। চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানি বাংলাদেশে ট্রায়াল করতে চাইল। আমাদের মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল যথাযথভাবেই অনুমতি দিল। কিন্তু আমাদের মন্ত্রী এবং সচিব একবাক্যে সেটি উড়িয়ে দিলেন। কেন উড়িয়ে দিলেন? আমি যদ্দূর জানি কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ ছিল না। কী ছিল, তারা জানেন।
কিন্তু আবার যখন কয়েক সপ্তাহ পরে তারা এটা করতে চাইলেন চীন তখন খরচ চালানোর জন্য টাকা চেয়ে বসলো। তাদের এই আমলাতান্ত্রিক ইগো থেকে উদ্ভূত যে সিদ্ধান্ত তার থেকে দেশের মানুষ ও অর্থনীতিকে ভুগতে হয়। দ্বিতীয় ঢেউতে যেন বিজ্ঞাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরে এই বক্তব্যের জবাবে মন্ত্রী তাজুল বলেন, এখানে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। আইইডিসিআর যা বলেছে এর বাইরে যদি কোন সংস্থা বলে তবে সরকার সংগত কারণেই আইইডসিআরের কথা শুনবে। সায়েন্টিফিক ডিসিশনের কথা বলি- যেমন রেড জোন, ইয়ালো জোন বিভিন্ন জোনে ভাগ করা হয়েছে। আমার এইসব জোনের ব্যাপারে সিরিয়াসিল দ্বিমত ছিল।
আমি ইনডিভিজুয়াল আইলোশেনের কথা বলেছিলাম। কিন্তু বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত আসলো জোনের বিষয়ে। আমরা বাস্তবায়ন করার পর দেখলাম ভাল কোন সিদ্ধান্ত পাইনি। আমাদের প্রচেষ্টায় আন্তরিকতার অভাব ছিল না। সব জায়গায় সফল হয়নি। কিন্তু অনেক সফলতা যে নেই এটা বলা যাবে না।
‘করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক ওই ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথম রোগী পাওয়া গেল ৮ মার্চ। এপ্রিলে সংক্রমণ হার হল ১০ শতাংশ। ৩১ মেতে ২০ শতাংশ ঠেকল। ২০ অগাস্টে ২০ এর ঘরে থাকল। ২১ অগাস্টে ১৮ এর ঘরে নামল। অনেকেতই প্রশ্ন করে পিক কবে হল?
নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারের, জনগণের প্রস্তুতি লাগবে। যদি দ্বিতীয় ঢেউ আসে, আসলে বোঝা যাবে। এই ভাইরাসের বয়স এক বছর হয়নি। শীতকালে কেমন ব্যবহার করে আমরা জানি না। অনেককিছু জানতে পারব। ভাইরাসের চরিত্র নিয়ে অনেক বুঝতে পারবো। শীতকালে আমরা এর ব্যবহার বুঝতে পারব।
হাঙ্জার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য জেহাদুল করিম, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল।